জালে ঘেরা বাগান। মাঝখানে কৃত্রিম ফোয়ারার ঝরনাধারা। চারদিকে গাছগাছালি। সবুজের মাঝে মনকাড়া ফুলের সুবাস। আর সবখানে হরেক রঙের প্রজাপতির ওড়াউড়ি—হলুদ, সাদা, ধূসর, কালো, কোনো কোনোটি নানা রঙের মিশেল। কখনো জালের গা ঘেঁষে বসছে। কখনো গাছের পাতায় কিংবা ফুলে ফুলে। অবাধ, নির্ভয় বিচরণ। ক্লান্ত হয়ে পড়লে নিচ্ছে বিশ্রাম। কিছুক্ষণের জন্য গাছের আড়ালে-আবডালে নিজেকে গুটিয়ে রাখছে। পরক্ষণে আবার বেরিয়ে পড়ছে। এ এক ভিন্ন পরিবেশ।
চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ প্রান্তে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে প্রজাপতির এ আবাস। নাম প্রজাপতি পার্ক। ইন্ট্রাকো গ্রুপের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। পার্কের সবকিছু প্রজাপতির আদলে করা। ঢোকার মুখে প্রধান ফটকে স্বাগত জানাবে বিশাল আকারের এক প্রজাপতি। অবশ্য সেটি কৃত্রিম—ইট-সিমেন্টের তৈরি। এবার জীবন্ত প্রজাপতির সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চান? তাহলে পার্কের বাম পাশে সোজা চলে যান প্রজাপতির বাগানে (বাটারফ্লাই গার্ডেন)। এটিই পার্কের মূল আকর্ষণ। লোহার ছোট শেকল আর মোটা পলিথিনের ভার্টিকাল স্লাইডারের নিরাপত্তাব্যুহ ঠেলে ভেতরে ঢুকেই বিস্ময়ের শেষ নেই। হাত বাড়ালেই হাতে এসে বসছে প্রজাপতি। আবার উড়ে গিয়ে বসছে কোনো গাছের পাতায়। ছোট-বড় প্রজাপতি রঙিন পাখা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে ঘরময়। একটা-দুটো নয়, অসংখ্য। নানা রঙের প্রজাপতি তৈরি করে অন্য রকম ভালোলাগা। প্রজাপতির এমন রূপে বিমোহিত হয়ে মনের মাঝে বেজে ওঠে ‘প্রজাপতি/প্রজাপতি কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা’। প্রজাপতির রাজ্য থেকে রেরোতেই চাইবে না মন। মুহূর্তেই যেন তাদের সখা বনে যাওয়া। তবে প্রজাপতির সৌন্দর্য দেখতে হলে আসতে হবে সকাল আটটা থেকে বেলা দুটোর মধ্যে। মূলত তখন খাবারের সন্ধানে ছুটে বেড়ায় তারা। দুপুরের পর বিশ্রামে যেতে থাকে। বিকেলে সূর্য যখন পশ্চিমে হেলে পড়ে, তখন গাছের পাতায় বিশ্রামে চলে যায় প্রজাপতি।
জানা গেল, পার্কে বর্তমানে ৫০ প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। এত সব প্রজাপতি খাবার পায় কোথায়? প্রশ্ন জাগতেই পারে। খাবারটা প্রজাপতির বাগানের মধ্যেই আছে। ঘরে লাগানো বিভিন্ন প্রজাতির গাছগুলো থেকে খাবার সংগ্রহ করে তারা। গাছগুলো সেভাবে লাগানো। তার পরও অতিরিক্ত খাবার দেয় পার্ক কর্তৃপক্ষ। ট্রেতে ছোট ছোট পাত্রে সাজানো থাকে খাবার। উড়ে উড়ে ক্লান্ত প্রজাপতি খিদে পেলে বসে পড়ছে ট্রেতে। সে খাবারের তালিকায় রয়েছে আনারসের রস, মধু ও গ্লুকোজ। এত ফল থাকতে শুধু আনারাস কেন? প্রজাপতির কি আনারস বেশি প্রিয়? পার্কের প্রকল্প পরিচালক এ কে এম মঈনুদ্দিন জানালেন সেই আনারস-রহস্য। বললেন, ‘আমরা অন্যান্য ফল দিয়ে দেখেছি। কিন্তু প্রজাপতি এসব ফল খায় না। কারণ ওই সব ফলে কেমিক্যাল দেওয়া। মানুষ বুঝতে না পারলেও প্রজাপতি ঠিকই ধরে ফেলে। ওরা এসব খায় না। তাই আনারসে যেহেতু কেমিক্যাল মেশানো হয় না, সেজন্য এটিই বেছে নেওয়া।’ শুধু যে পার্ক কর্তৃপক্ষের দেওয়া খাবার খায় প্রজাপতি, তা নয়। দর্শনার্থীরা চাইলে প্রজাপতিকে খাবার দিতে পারেন। অবশ্য সেসব খাবার পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কিনে নিতে হবে।
প্রজাপতির রূপে বিমোহিত হয়ে বাগান থেকে বের হতেই চোখে পড়বে আরেক বিশাল প্রজাপতি। এত বড় প্রজাপতি! কাছে গেলে ভ্রম ভাঙবে। আসলে এটি প্রজাপতির বেঞ্চ। যেখানে বসলে মনে হবে নিজেরই বুঝি প্রজাপতির ডানা গজাল। ডানা নিয়ে সন্তুষ্ট না হলে নিজেই হয়ে যেতে পারেন প্রাজপতি! সে ব্যবস্থাও আছে। প্রজাপতির একটি ডামিতে শুধু মুখের দিকটা ফাঁকা। সেখানে মাথা দিয়ে ক্যামেরায় ক্লিক করলেই সহজে বনে যাওয়া যায় প্রজাপতি। উড়তে না পারলেও অন্তত প্রজাপতি হওয়ার স্বাদ তো মিটল!
দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে প্রজাপতি জাদুঘর। এ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে বিরল সব প্রজাতির প্রজাপতিও। পার্কের কোনো প্রজাপতির মারা গেলে সেটি সংরক্ষণ করা হচ্ছে। আবার কোথাও বিরল প্রজাতির কোনো প্রজাপতির সন্ধান পেলে তা-ও এনে রাখা হচ্ছে এখানে। জাদুঘরে বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া প্রজাপতির মধ্যে ১৫০ প্রজাতি রয়েছে।
লালন-পালনের পাশাপাশি প্রজাপতির প্রজননও হচ্ছে এখানে। প্রজাপতি ডিম দিলে তা পার্কের কৃত্রিম প্রজননকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে নতুন প্রজাপতির আগমন ঘটানো হয়। প্রাকৃতিকভাবেও প্রজাপতির প্রজনন হয়। কিন্তু এতে নানা বাধা পেরোতে হয়। মোকাবিলা করতে হয় শত্রুর। সাধারণত একটি মা-প্রজাপতি ১৫০ থেকে ২০০ ডিম দেয়। কিন্ত তা থেকে প্রজাপতি হয় মাত্র দুই থেকে তিন শতাংশ। অনেক ডিম ন্ষ্ট করে দেয় পিঁপড়া বা অন্যান্য কীটপতঙ্গ। অবশ্য পার্কে প্রকৃতিক প্রজননও নির্বিঘ্নে করতে ব্যবস্থা নেওয়া আছে। প্রজাপতির সংখ্যা আরও বাড়াতে পার্কের উত্তর কোণে নির্মাণ করা হচ্ছে আরও বড় পরিসরের আধুনিক প্রজননকেন্দ্র। এটি চালু হলে প্রজাপতির ডিম নষ্টের হার একেবারে কমে আসবে।
যেভাবে শুরু
বাইরের দেশের প্রজাপতি পার্ক দেখে বাংলাদেশেও এ পার্ক করার উদ্যোগ নেয় ইন্ট্রাকো গ্রুপ। উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য দেশের একমাত্র প্রজাপতি পার্কটি হয়ে উঠবে একটি গবেষণাকেন্দ্রও। ইতিমধ্যে দেশে শনাক্ত হওয়া অনেক প্রজাতির প্রজাপতি হারিয়ে গেছে। বর্তমানে যেগুলো আছে, সেগুলো যেন বংশ বৃদ্ধির অভাবে হারিয়ে না যায়, তাঁরা সে চেষ্টাই করে যাচ্ছেন। সে লক্ষ্যে ছয় একর জায়াগায় ২০১০ সালের ১৪ এপ্রিল এ পার্কের যাত্রা শুরু।
পার্কের প্রাণী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শফিক হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘বিদেশে প্রজাপতি পার্ক বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক। আমাদের দেশেও সম্ভব। পার্কের নতুন প্রজননকেন্দ্র চালু হলে প্রজাপতির সংখ্যা আরও বাড়বে। জালের বাগানের বাইরে পুরো পার্কেই তখন প্রজাপতি উড়ে বেড়াবে।’
চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ প্রান্তে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে প্রজাপতির এ আবাস। নাম প্রজাপতি পার্ক। ইন্ট্রাকো গ্রুপের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। পার্কের সবকিছু প্রজাপতির আদলে করা। ঢোকার মুখে প্রধান ফটকে স্বাগত জানাবে বিশাল আকারের এক প্রজাপতি। অবশ্য সেটি কৃত্রিম—ইট-সিমেন্টের তৈরি। এবার জীবন্ত প্রজাপতির সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চান? তাহলে পার্কের বাম পাশে সোজা চলে যান প্রজাপতির বাগানে (বাটারফ্লাই গার্ডেন)। এটিই পার্কের মূল আকর্ষণ। লোহার ছোট শেকল আর মোটা পলিথিনের ভার্টিকাল স্লাইডারের নিরাপত্তাব্যুহ ঠেলে ভেতরে ঢুকেই বিস্ময়ের শেষ নেই। হাত বাড়ালেই হাতে এসে বসছে প্রজাপতি। আবার উড়ে গিয়ে বসছে কোনো গাছের পাতায়। ছোট-বড় প্রজাপতি রঙিন পাখা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে ঘরময়। একটা-দুটো নয়, অসংখ্য। নানা রঙের প্রজাপতি তৈরি করে অন্য রকম ভালোলাগা। প্রজাপতির এমন রূপে বিমোহিত হয়ে মনের মাঝে বেজে ওঠে ‘প্রজাপতি/প্রজাপতি কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা’। প্রজাপতির রাজ্য থেকে রেরোতেই চাইবে না মন। মুহূর্তেই যেন তাদের সখা বনে যাওয়া। তবে প্রজাপতির সৌন্দর্য দেখতে হলে আসতে হবে সকাল আটটা থেকে বেলা দুটোর মধ্যে। মূলত তখন খাবারের সন্ধানে ছুটে বেড়ায় তারা। দুপুরের পর বিশ্রামে যেতে থাকে। বিকেলে সূর্য যখন পশ্চিমে হেলে পড়ে, তখন গাছের পাতায় বিশ্রামে চলে যায় প্রজাপতি।
জানা গেল, পার্কে বর্তমানে ৫০ প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। এত সব প্রজাপতি খাবার পায় কোথায়? প্রশ্ন জাগতেই পারে। খাবারটা প্রজাপতির বাগানের মধ্যেই আছে। ঘরে লাগানো বিভিন্ন প্রজাতির গাছগুলো থেকে খাবার সংগ্রহ করে তারা। গাছগুলো সেভাবে লাগানো। তার পরও অতিরিক্ত খাবার দেয় পার্ক কর্তৃপক্ষ। ট্রেতে ছোট ছোট পাত্রে সাজানো থাকে খাবার। উড়ে উড়ে ক্লান্ত প্রজাপতি খিদে পেলে বসে পড়ছে ট্রেতে। সে খাবারের তালিকায় রয়েছে আনারসের রস, মধু ও গ্লুকোজ। এত ফল থাকতে শুধু আনারাস কেন? প্রজাপতির কি আনারস বেশি প্রিয়? পার্কের প্রকল্প পরিচালক এ কে এম মঈনুদ্দিন জানালেন সেই আনারস-রহস্য। বললেন, ‘আমরা অন্যান্য ফল দিয়ে দেখেছি। কিন্তু প্রজাপতি এসব ফল খায় না। কারণ ওই সব ফলে কেমিক্যাল দেওয়া। মানুষ বুঝতে না পারলেও প্রজাপতি ঠিকই ধরে ফেলে। ওরা এসব খায় না। তাই আনারসে যেহেতু কেমিক্যাল মেশানো হয় না, সেজন্য এটিই বেছে নেওয়া।’ শুধু যে পার্ক কর্তৃপক্ষের দেওয়া খাবার খায় প্রজাপতি, তা নয়। দর্শনার্থীরা চাইলে প্রজাপতিকে খাবার দিতে পারেন। অবশ্য সেসব খাবার পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কিনে নিতে হবে।
প্রজাপতির রূপে বিমোহিত হয়ে বাগান থেকে বের হতেই চোখে পড়বে আরেক বিশাল প্রজাপতি। এত বড় প্রজাপতি! কাছে গেলে ভ্রম ভাঙবে। আসলে এটি প্রজাপতির বেঞ্চ। যেখানে বসলে মনে হবে নিজেরই বুঝি প্রজাপতির ডানা গজাল। ডানা নিয়ে সন্তুষ্ট না হলে নিজেই হয়ে যেতে পারেন প্রাজপতি! সে ব্যবস্থাও আছে। প্রজাপতির একটি ডামিতে শুধু মুখের দিকটা ফাঁকা। সেখানে মাথা দিয়ে ক্যামেরায় ক্লিক করলেই সহজে বনে যাওয়া যায় প্রজাপতি। উড়তে না পারলেও অন্তত প্রজাপতি হওয়ার স্বাদ তো মিটল!
দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে প্রজাপতি জাদুঘর। এ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে বিরল সব প্রজাতির প্রজাপতিও। পার্কের কোনো প্রজাপতির মারা গেলে সেটি সংরক্ষণ করা হচ্ছে। আবার কোথাও বিরল প্রজাতির কোনো প্রজাপতির সন্ধান পেলে তা-ও এনে রাখা হচ্ছে এখানে। জাদুঘরে বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া প্রজাপতির মধ্যে ১৫০ প্রজাতি রয়েছে।
লালন-পালনের পাশাপাশি প্রজাপতির প্রজননও হচ্ছে এখানে। প্রজাপতি ডিম দিলে তা পার্কের কৃত্রিম প্রজননকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে নতুন প্রজাপতির আগমন ঘটানো হয়। প্রাকৃতিকভাবেও প্রজাপতির প্রজনন হয়। কিন্তু এতে নানা বাধা পেরোতে হয়। মোকাবিলা করতে হয় শত্রুর। সাধারণত একটি মা-প্রজাপতি ১৫০ থেকে ২০০ ডিম দেয়। কিন্ত তা থেকে প্রজাপতি হয় মাত্র দুই থেকে তিন শতাংশ। অনেক ডিম ন্ষ্ট করে দেয় পিঁপড়া বা অন্যান্য কীটপতঙ্গ। অবশ্য পার্কে প্রকৃতিক প্রজননও নির্বিঘ্নে করতে ব্যবস্থা নেওয়া আছে। প্রজাপতির সংখ্যা আরও বাড়াতে পার্কের উত্তর কোণে নির্মাণ করা হচ্ছে আরও বড় পরিসরের আধুনিক প্রজননকেন্দ্র। এটি চালু হলে প্রজাপতির ডিম নষ্টের হার একেবারে কমে আসবে।
যেভাবে শুরু
বাইরের দেশের প্রজাপতি পার্ক দেখে বাংলাদেশেও এ পার্ক করার উদ্যোগ নেয় ইন্ট্রাকো গ্রুপ। উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য দেশের একমাত্র প্রজাপতি পার্কটি হয়ে উঠবে একটি গবেষণাকেন্দ্রও। ইতিমধ্যে দেশে শনাক্ত হওয়া অনেক প্রজাতির প্রজাপতি হারিয়ে গেছে। বর্তমানে যেগুলো আছে, সেগুলো যেন বংশ বৃদ্ধির অভাবে হারিয়ে না যায়, তাঁরা সে চেষ্টাই করে যাচ্ছেন। সে লক্ষ্যে ছয় একর জায়াগায় ২০১০ সালের ১৪ এপ্রিল এ পার্কের যাত্রা শুরু।
পার্কের প্রাণী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শফিক হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘বিদেশে প্রজাপতি পার্ক বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক। আমাদের দেশেও সম্ভব। পার্কের নতুন প্রজননকেন্দ্র চালু হলে প্রজাপতির সংখ্যা আরও বাড়বে। জালের বাগানের বাইরে পুরো পার্কেই তখন প্রজাপতি উড়ে বেড়াবে।’
No comments:
Post a Comment