রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার পূর্ব দিকে মন্দিরের এক শহরের নাম পুঠিয়া। রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত পুঠিয়া রাজবাড়ির বিশাল চত্বরে রয়েছে বেশ কয়েকটি নজর কাড়া প্রাচীন মন্দির। শুধু মন্দিরই নয়, আছে রাজবাড়ি, পুকুর-দিঘিসহ নানান প্রাচীন স্থাপনা। কড়চার এবারের বেড়ানো পুঠিয়ার সেই মন্দিরের শহরে।
শিব মন্দির
মহা সড়ক ছেড়ে সরু পথ ধরে কিছুটা পথ চলতেই বিশাল একটি চূড়া জানান দেয় মন্দিরটির অবস্থান। পুঠিয়া রাজবাড়ীর প্রবেশপথে পুকুর পাড়ে বড় আকৃতির এ মন্দিরটির নাম শিব মন্দির। পুঠিয়ার রাণী ভুবন মোহিনী দেবী ১৮২৩ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিদিকে ৬৫ ফুট দীর্ঘ শিব মন্দিরটি একটি উঁচু ভিতের উপরে নির্মিত এবং এর চার কোনায় চারটি আর কেন্দ্রে একটি রত্ন আছে। মন্দিরের দোতলায় একটি মাত্র কক্ষ এবং কক্ষের চারপাশে দুই স্তরে বারান্দা বিদ্যমান। মূল কক্ষের অভ্যন্তরে অধিষ্ঠিত আছে কষ্ঠি পাথরের বিশাল এক শিব লিঙ্গ। পুরো মন্দিরের দেয়াল পৌরাণিক কাহিনি চিত্র খচিত। মূল্যবান এ স্থাপনাটি দীর্ঘ দিন পড়ে ছিল অযত্ন আর অবহেলায়। তবে সুখের কথা হলো বর্তমানে এটির সংস্কারের কাজ চলছে। এশিয়ার অন্যতম বড় শিব মন্দির বলা হয় পুঠিয়ার এ মন্দিরটিকে। এর লাগোয়া পূর্ব পাশে গোল গম্বুজ আকৃতির আরেকটি ছোট মন্দির আছে।
দোলমঞ্চ
শিব মন্দির ছাড়িয়ে একটু দক্ষিণে গেলেই চোখে পড়বে চার তলা বিশিষ্ট দোলমন্দির। দোলমঞ্চের আকারে মন্দিরটি ধাপে ধাপে ওপরে উঠে গেছে। চতুর্থ তলার ওপরে আছে গম্বুজাকৃতির চূড়া। প্রত্যেক তলার চারপাশে আছে টানা বারান্দা। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে পুঠিয়ার রানি হেমন্ত কুমারী দেবী এ মন্দির নির্মাণ করেন।
পুঠিয়া রাজবাড়ি
দোলমঞ্চের সামনে ঘাসে ঢাকা বিশাল মাঠ। দক্ষিণ প্রান্তে মুখোমুখি ঠায় দাঁড়িয়ে ধ্বংসের প্রহর গুনছে বিশাল একটি স্থাপনা। ইট থেকে পলেস্তরা খসে যাওয়া এ প্রাসাদটি নিজের বয়সের জানান দিবে সবাইকে। এটিই বিখ্যাত পুঠিয়া রাজবাড়ি। রানি হেমন্তকুমারী দেবী তাঁর শাশুড়ি মহারানি শরত্সুন্দরী দেবীর সম্মানার্থে ১৮৯৫ সালে নির্মাণ করেন এ রাজবাড়ি । বর্তমানে লস্করপুর ডিগ্রি কলেজের একাডেমিক ভবন হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে এ ভবনটি। ভবনের পূর্ব পাশে আছে রানি পুকুর। রাজবাড়ির সম্ভ্রান্ত মহিলাদের গোসলের জন্য রানি পুকুরের দেয়াল ঘেরা সান বাঁধানো ঘাটের অস্তিত্ব এখনো বিদ্যমান।
গোবিন্দ মন্দির
পুঠিয়া রাজবাড়ির প্রাচীরের ভেতরে পোড়ামাটির অলঙ্করণে সমৃদ্ধ একটি মন্দির। বর্গাকারে নির্মিত এ মন্দিরের প্রত্যেক পাশের দৈর্ঘ্য ১৪.৬ মিটার। কেন্দ্রীয় কক্ষ ছাড়াও মন্দিরটির চারপাশে বর্গাকার চারটি কক্ষ আছে। মন্দিরটি ২৫০ বছরের পুরোনো বলে প্রচলিত থাকলেও এর গায়ে চিত্র ফলক দেখে ধারণা করা হয় যে, এটি ঊনবিংশ শতাব্দীতে নির্মিত। এ মন্দিরের দক্ষিণ পাশে প্রাচীরের বাইরে অলঙ্করণসমৃদ্ধ ছোট আরেকটি মন্দির রয়েছে।
বড় আহ্নিক মন্দির
পুঠিয়া রাজবাড়ির পশ্চিম পাশে দিঘি। তার পশ্চিম তীরেই রয়েছে পূর্বমূখী বড় আহ্নিক মন্দির। কারুকার্য মণ্ডিত এ মন্দিরের নির্মাণশৈলী বেশ আকর্ষণীয়।
গোপাল মন্দির
বড় আহ্নিক মন্দিরের পাশে দক্ষিণমুখী অবস্থানে আছে গোপাল মন্দির। ১৬.৩০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০.৪৭ মিটার প্রস্থের এ মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ৮ মিটার।
কীভাবে যাবেন
নিজস্ব গাড়িতে জায়গাটিতে ভ্রমণে গেলে রাজশাহী শহরের প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার আগে পড়বে জায়গাটি। এ ছাড়া রাজশাহীগামী যেকোনো বাসে গিয়েও পুঠিয়া নামা যায়। আবার রাজশাহী থেকে লোকাল বাসে পুঠিয়া আসতে সময় লাগে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা। রাজশাহী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে নাটোরগামী বাসে চড়ে পুঠিয়া নামা যায়। ভাড়া ৩৫-৪০ টাকা।
ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলপথে রাজশাহী যাওয়া গ্রীন লাইনের (০১৭৩০০৬০০০৪) তাপনিয়ন্ত্রিত বাসে। ভাড়া ৫০০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে শ্যামলী পরিবহন (০২-৯১৪১০৪৭), হানিফ এন্টারপ্রাইজ (০২-৯১৩৫০১৮), ন্যাশনাল পরিবহন, ইত্যাদি পরিবহনের সাধারণ বাস যায় রাজশাহী। ভাড়া ২৮০-৩০০ টাকা। ঢাকার কমলাপুর থেকে রোববার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন সিল্কসিটি এক্সপ্রেস এবং ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পদ্মা এক্সপ্রেস। ভাড়া এসি বার্থ ৬৮০ টাকা, এসি সিট ৪৬৬, প্রথম শ্রেণী বার্থ ৪০৫, প্রথম শ্রেণী সিট ২৮৫ টাকা, স্নিগ্ধা ৩৪৪ টাকা, শোভন চেয়ার ১৬৫ টাকা, শোভন ১৪০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
পুঠিয়া ভ্রমণে গেলে রাত যাপন করার জন্য রাজশাহীই উত্তম। এ শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের বেশ কিছু হোটেল আছে। এসব হোটেলে ২০০-৪০০০ টাকায় বিভিন্ন মানের কক্ষ পাওয়া যাবে। রাজশাহী চিড়িয়াখানার সামনে পর্যটন মোটেল (০৭২১-৭৭৫২৩৭, ০৭২১-৭৭০২৪৭), সাহেব বাজারে হোটেল মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল (০৭২১-৭৭১১০০, ০১৭১১৩০২৩২২), বিন্দুরমোড় রেল গেইটে হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনাল (০৭২১-৭৭৩৮৩৯, ০১৭১১৮০২৩৮৭), গণকপাড়ায় হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল (০৭২১-৭৬১৮৮, ৭৭১৮০৮), মালোপাড়ায় হোটেল সুকর্ণা ইন্টারন্যাশনাল (০৭২১-৭৭১৮১৭, ০১৭১৩৭২৪২৮৪), সাহেব বাজারে হামিদিয়া গ্রান্ড হোটেল (০৭২১-৭৭২৯৩০, ০১৭১৩৭০১০৫০), শিরোইলে হকস্ ইন (০৭২১-৮১০৭২১, ০১৭১৫৬০৫১৫৭), লক্ষ্মীপুর মোড়ে হোটেল গ্যালাক্সি (৮১২৭৪০, ০১৭৩৫৬৯২০২৯), সাহেব বাজারে হোটেল নিউ টাউন ইন্টারন্যাশনাল (০৭২১-৭৭৪৯৬১, ০১৭১৩৭০৪৩১৪)।
লেখা ও আলোকচিত্র মুস্তাফিজ মামুন
No comments:
Post a Comment