Pages

Friday, July 27, 2012

চট্টগ্রামের কয়েকটি সমুদ্রসৈকত


Details
বন্দর নগরী চট্টগ্রামের কাছাকাছি রয়েছে কয়েকটি আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত। শহরের দক্ষিণপ্রান্তে পতেঙ্গা ছাড়াও আছে কাট্টলী সমুদ্র সৈকত, সীতাকুণ্ডের বোয়ালিয়াকুল সমুদ্র সৈকত আর আরেকটু দূরের পারকি সমুদ্র সৈকত। চট্টগ্রাম থেকে খুব সহজেই ঘুরে আসতে পারেন এসব সৈকতের বেলাভূমি থেকে।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত
চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ প্রান্তের সৈকতটির নাম পতেঙ্গা। এটি চট্টগ্রামের সবচেয়ে পর্যটকপ্রিয় ভ্রমণ স্থান। শাহ আমানত বিমান বন্দরের কাছেই এ সৈকতটির অবস্থান। শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। প্রতিদিন শত শত পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত থাকে এ সৈকতটি। এখানে দাঁড়িয়ে বন্দরের বহির্নোঙ্গরে অপেক্ষমান জাহাজগুলো দেখা যায়। সন্ধ্যার পরে সেগুলোকে মনে হয় সমুদ্রের মাঝে একটি আলো ঝলমলে শহরের মতো। পতেঙ্গা সৈকতে সূর্যাস্তের দৃশ্যও দেখা যায় ভালোভাবে। শহর থেকে বন্দর রোড ধরে গেলে নতুন এয়ারপোর্ট এলাকাটিও ঘুরে দেখে আসতে পারেন। এয়ারপোর্টের সামনে কর্ণফুলী নদীর দৃশ্যটাও মনোহর। শহর থেকে পতেঙ্গার বেবিটেক্সি ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা। বাস কিংবা টেম্পুতে গেলে ভাড়া লাগবে ৪০-৫০ টাকা।
কাট্টলী সমুদ্র সৈকত
চট্টগ্রাম শহর থেকে কিছুটা দূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকতটির নাম কাট্টলী সমুদ্র সৈকত। এর আরেকটি নাম জেলেপাড়া সমুদ্র সৈকত। জায়গাটির নৈসর্গিক সৌন্দর্য সহজেই বিমোহিত করে প্রকৃতিপ্রেমীদের। চট্টগ্রাম শহর থেকে টোল সড়ক ধরে সহজেই পৌঁছুতে পারেন জায়গাটিতে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের একমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পাশ দিয়েও এ সৈকতে আসা যায়। এ জায়গাটির নাম সাগরিকা সমুদ্র সৈকত।  
বোয়ালিয়াকুল সমুদ্র সৈকত
চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার উত্তরে বাঁশবাড়িয়া বাজারের পশ্চিম পাশের সড়কটি ধরে প্রায় এক কিলোমিটার এগোলেই বোয়ালিয়াকুল সমুদ্র সৈকত। সমুদ্র তীরে বিশাল ঝাউ বনের পাশে এখানে আছে বিস্তীর্ণ বেলাভূমি। এ সৈকতটির সৌন্দর্যও সহজেই দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম পর্যটকদের। চট্টগ্রাম শহর থেকে বেবি টেক্সি কিংবা বাসে সহজেই আসা যায় জায়গাটিতে। শহরের অলঙ্কার মোড় থেকে সীতাকুণ্ডগামী যেকোনো বাসে উঠে আসতে পারেন।
পারকি সমুদ্র সৈকত
চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে আনোয়ারা উপজেলার গহিরা এলাকায় রয়েছে মনোরম একটি সমুদ্র সৈকত পারকি। প্রায় পঁচিশ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সৈকতের তীর জুড়ে আছে বিস্তীর্ণ ঝাউবন। সৈকতে প্রবেশের পথটিও বেশ আকর্ষণীয়। দুপাশে সারি সারি গাছ মনকে ভালো করে দেয়। সমুদ্রের সৌন্দর্যের পাশাপাশি এখানে উপভোগ করা যাবে জেলেদের মাছ ধরার নানান কৌশল ও তাদের জীবন ধারা। স্থানীয় ভাষায় পারকির চর নামেই পরিচিত এই সমুদ্র সৈকত। এটি মূলত কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। কর্ণফুলীর মোহনার পশ্চিম তীরে পতেঙ্গা সৈকত এবং পূর্ব-দক্ষিণ তীরে পারকি সৈকত। চট্টগ্রাম সার কারখানা ও কাফকো’র পথ ধরে এই সৈকতে যেতে হয়।
চট্টগ্রাম শহর থেকে সরাসরি কোনো বাস পারকি যায় না। শহর থেকে ভাড়ায় চালিত গাড়ি, কিংবা সিএনজি চালিত বেবি টেক্সি নিয়ে যেতে হবে। প্রাইভেট কার, মাইক্রো বাসের সারাদিনের জন্য ভাড়া লাগবে ১৫০০-৩০০০ টাকা। আর বেবি টেক্সি ৬০০-১০০০ টাকা। 
বাঁশখালী সৈকত
শহর থেকে প্রায় বিশ কিলোমিটার দূরে রয়েছে আরেকটি সুন্দর সমুদ্র সৈকত বাঁশখালী। ঝাউ গাছে ঘেরা দীর্ঘ একটি সমুদ্র সৈকত আছে এখানে। শহরের বহদ্দার হাট থেকে বাসে এসে নামতে হবে মুনছুরিয়া বাজার। সেখান থেকে রিকশায় সুমুদ্র সৈকত। বাসে যেতে সময় লাগে এক ঘণ্টার মতো। 
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশ পথে যেতে পারেন চট্টগ্রাম শহরে। ঢাকার বাসগুলো সাধারণত শহরে প্রবেশ করে ফয়’স লেকের সামনের সড়ক থেকেই। শহরের যেকোনো জায়গা থেকে খুব সহজেই ফয়’স লেক আসা যায়। ঢাকা থেকে সড়কপথে গ্রিনলাইন (০২-৭১০০৩০১), সোহাগ (০২-৯৩৩৪১৫২), সৌদিয়া (০১১৯৭০১৫৬১০), টি আর (০২-৮০৩১১৮৯), হানিফ (০১৭১৩৪০২৬৭১) ইত্যাদি পরিবহনের এসি বিলাসবহুল বাস যায় চট্টগ্রামে। ভাড়া ৭৫০-১০৫০ টাকা। আর এস আলম, সৌদিয়া, ইউনিক, শ্যামলী, হানিফ, ঈগল প্রভৃতি পরিবহনের সাধারণ মানের বাসে ভাড়া ৩৫০-৪৫০ টাকা। রেল পথে ঢাকা-চট্টগ্রামের পথে মহানগর প্রভাতী ঢাকা ছাড়ে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে, চট্টলা এক্সপ্রেস সকাল ৯টা বিশ মিনিটে, মহানগর গোধূলী ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৩টায়, সুবর্ণ এক্সপ্রেস ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে, তূর্ণা ঢাকা ছাড়ে রাত এগারোটায়। ভাড়া এসি বার্থ ৭৫৬ টাকা, এসি সিট ৪৫৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী বার্থ ৪৫৫, প্রথম শ্রেণী চেয়ার ২৯০ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণী ৩৮০ টাকা, শোভন চেয়ার ১৫০ টাকা, শোভন ১২৫ টাকা, সুলভ ১০০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান (০২-৯৫৬০১৫১-১০), জিএমজি এয়ারলাইন্স (০২-৮৯২২২৪৮) ও ইউনাইটেড এয়ার (০২-৮৯৫৭৬৪০), রিজেন্ট এয়ার (০২-৮৯৫৩০০৩)-এর  বিমানে সরাসরি যেতে পারেন চট্টগ্রাম শহরে।
কোথায় থাকবেন
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের কাছেই আধুনিক থাকার ব্যবস্থা আছে বাটারফ্লাই পার্কে। এখানকার রেস্টহাউজে কক্ষে বসেই উপভোগ করা যায় বাহারি প্রজাপতির ওড়াউড়ি। এ পার্কের বাটারফ্লাই স্যুইট কক্ষের প্রতিদিনের ভাড়া ৭,০০০ টাকা, সুপার ডিলাক্স কক্ষের ভাড়া ৫০০০ টাকা ও সাধারণ কক্ষের ভাড়া ৪০০০ টাকা। বর্তমানে প্রজাপতির মৌসুম হওয়ায় উপরের সব মূল্যের উপরে চলছে ৩৫% ছাড় । যোগাযোগ- ১৫, নেভাল একাডেমি, পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম। ফোন- ০১৯৭৫০০৬০৯৪, ০১৮১১৪৪৪২৭০।
এ ছাড়াও চট্টগ্রাম শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের প্রচুর হোটেল আছে। এখানে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হোটেলের যোগাযোগের ঠিকানা দেয়া হলো। শহরের আগ্রাবাদ এলাকায় হোটেল আগ্রাবাদ (০৩১-৭১৩৩১১-৮), হোটেল পেনিনসুলা (০৩১-৬১৬৭২২, ৬১৯৮৫০)। স্টেশন রোডে হোটেল এশিয়ান (০৩১-২৮৫০৩৪৬-৮, ৮০০-২০০০ টাকায় কক্ষ আছে)। স্টেশন রোডে হোটেল সুপার (০৩১-৮৪১৪৫১-২, ৬০০-১৫০০ টাকায় কক্ষ আছে)। খুলশী এলাকায় হোটেল লর্ডস (০৩১-২৫৫২৬৭১-৪)। পাঁচলাইশ এলাকায় রওশন বোর্ডিং (০৩১-৬৫১৪১৬)। জুবিলী রোডে হোটেল টাওয়ার ইন (০৩১-৮৪২৬৯১-২)। এছাড়াও চট্টগ্রাম শহরের প্রতিটি এলাকাতেই আছে বিভিন্ন মানের হোটেল।

লেখক: আলোকচিত্রও লেখা মোস্তাফিজুর রহমান

No comments:

Post a Comment