Pages

Sunday, July 29, 2012

ঈদের ছুটিতে পাহাড়


Details
পাহাড়ে ভ্রমণ যাদের পছন্দ এবারের ঈদের ছুটিতে তাদের গন্তব্য হতে পারে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান কিংবা খাগড়াছড়ি। বর্ষার ছোঁয়ায় পাহারের শরীরে এখন সবুজের সমারোহ, উঁচু পাহাড়ের চূড়াগুলোর সঙ্গে মেঘের মিতালি। এসময়ে পাহাড়ে বেড়িয়ে ভালোই সময় কাটবে। ঈদের ছুটিতে সব ভ্রমণ গন্তব্যেই এখন পর্যটকদের ভিড় লাগে। তাই আগে থেকেই জায়গাটি নির্বাচন করে সে জায়গায় যাবার বাসের টিকেট, হোটেল ইত্যাদি আগে থেকেই নিশ্চিত করে রাখা ভালো। পাহাড়ে ভ্রমণের সেসব ফিরিস্তি নিয়েই কড়চার এবারের ফিচার।
রাঙ্গামাটি
পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম একটি জেলা রাঙ্গামাটি। কাপ্তাই লেকের বুকে জেগে থাকা ছোট্ট এই জেলা শহর। শহরে বেড়ানোর মতো জায়গা হলো উপজাতীয় জাদুঘর। জাদুঘরটি খোলা থাকে সোম থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। শনি, রবি ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনগুলোতে জাদুঘর বন্ধ থাকে। জাদুঘরে বড়দের প্রবেশ মূল্য পাঁচ টাকা ও ছোটদের দুই টাকা। উপজাতীয় জাদুঘর থেকে কাছেই রাজবনবিহার। এ অঞ্চলের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থ স্থান এটি। রাজবনবিহারের পাশেই কাপ্তাই লেকের ছোট্ট একটি দ্বীপজুড়ে রয়েছে চাকমা রাজার রাজবাড়ি। নৌকায় পার হয়ে খুব সহজেই যাওয়া যায় এই রাজবাড়িতে। রাঙ্গামাটি শহরের একেবারে শেষ প্রান্তে রিজার্ভ বাজার ছাড়িয়ে আরও প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে রয়েছে পর্যটন কমপ্লেক্সে। এই কমপ্লেক্সের ভেতরেই রয়েছে রাঙ্গামাটির ল্যান্ডমার্ক ঝুলন্ত সেতু। সেতু পেরিয়ে সামনের পাহাড়ে উঠলে কাপ্তাই লেকের বড় অংশ দেখা যায়। রাঙ্গামাটি শহরের পাশেই কাপ্তাই লেক। এ লেকের স্বচ্ছ পানি আর বাঁকে বাঁকে পাহাড়ের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। শহরের রিজার্ভ বাজার ঘাটে পাওয়া যায় কাপ্তাই লেকে ভ্রমণের নানা রকম ইঞ্জিন নৌকা। শুভলং যাবার পথে কাপ্তাই লেকের মাঝে ছোট ছোট দ্বীপজুড়ে আছে টুক টুক ইকো ভিলেজ ও পেদা টিংটিং এ। এখাকার রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায় বিভিন্ন রকম পাহাড়ি মেন্যু। সারাদিন কাপ্তাই লেকের এসব জায়গা ভ্রমণের জন্য একটি ইঞ্জিন বোটের ভাড়া পড়বে ১০০০-২৫০০ টাকা।
কীভাবে যাবেন :ঢাকার কলাবাগান, ফকিরাপুল ও কমলাপুর থেকে সরাসরি রাঙ্গামাটির উদ্দেশে ছেড়ে যায় ডলফিন পরিবহন, এস আলম, সৌদিয়া পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, ইউনিক সার্ভিস ইত্যাদি।  ভাড়া জনপ্রতি ৩৫০-৪০০ টাকা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম শহরের সিনেমা প্যালেস এবং বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতি বিশ মিনিট পর পর রাঙ্গামাটির উদ্দেশে ছেড়ে যায় বিরতিহীন বাস। ভাড়া জনপ্রতি ৭০-৯০ টাকা।
কোথায় থাকবেন :রাঙ্গামাটি শহরে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি হোটেল আছে। পর্যটন কমপ্লেক্সের ভেতরে পর্যটন মোটেল (০৩৫১-৬৩১২৬), কাঠালতলীতে হোটেল সুফিয়া (০৩৫১-৬২১৪৫)  ইত্যাদি।     
বান্দরবান :পার্বত্য চট্টগ্রামের আরেক ভ্রমণ তীর্থ বান্দরবান। এ জেলার সর্বত্রই রয়েছে বেড়ানোর মতো আকর্ষণীয় সব জায়গা। বান্দরবান শহরের মধ্যেই আছে বোমাং রাজার রাজবাড়ি। রাজার উত্তরসূরিরা এখনো এসব বাড়িতে বসবাস করেন। শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান চন্দ্রঘোনা সড়কের পুল পাড়ায় রয়েছে জাদির পাহাড়। এ পাহাড়ের চূড়ায় আছে আকর্ষণীয় একটি বৌদ্ধ মন্দির। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের এ স্বর্ণ মন্দিরের নাম বুদ্ধধাতু জাদি। শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের পাশেই রয়েছে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স। ঝুলন্ত ব্রিজ, চিড়িয়াখানা ও মিনি সাফারি পার্ক আছে এখানে। শহরের কাছে সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের নাম নীলাচল। শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে টাইগার পাড়ায় এ পাহাড়টির উচ্চতা প্রায় এক হাজার ফুট। এখানে দাঁড়িয়ে বান্দরবান শহরসহ দূর-দূরান্তের অনেক জায়গার সৌন্দর্য দেখা যায়। নিজস্ব বাহন না থাকলে শহর থেকে চাঁদের গাড়ি রিজার্ভ করে নিতে হবে। যাওয়া-আসার ভাড়া লাগবে ৮০০-১২০০ টাকা। বান্দরবান শহর থেকে চিম্বুক যাওয়ার পথে মনোরম একটি জায়গা শৈলপ্রপাত। শহর থেকে এর দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। এখানকার হিম শীতল ঝরনাধারা সারা বছরজুড়েই বহমান। শৈল প্রপাতের পাশেই রয়েছে স্থানীয় আদিবাসীদের একটি ভ্রাম্যমাণ বাজার। তাদের তৈরি চাদর আর পাহাড়ি ফলমূল কিনতে পারেন এ বাজার থেকে। আর পাশেই আছে বম আদিবাসীদের একটি গ্রাম। শৈল প্রপাত থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে রয়েছে চিম্বুক পাহাড়। চিম্বুকের দুর্গম পাহাড়ি পথ খুবই আঁকাবাঁকা। কোথাও কোথাও পথ খুবই খাড়া। চিম্বুক পাহাড়ের চূড়া থেকে দেখা যায় চারদিকে শুধু সবুজ আর ধূ ধূ দিগন্ত। আকাশ পরিষ্কার থাকলে দৃষ্টিসীমা চলে যায় একেবারে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত একটি মনোরম পর্যটন কেন্দ্র নীলগিরি। সেনাবাহিনী পরিচালিত এ পর্যটন কেন্দ্রটিতে থাকার জন্য কটেজ আছে। নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে যেদিকে চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়।
কীভাবে যাবেন :ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবান যায় এস আলম সার্ভিস, ডলফিন পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন এবং ইউনিক সার্ভিস। প্রতিদিন সকালে ও রাতে ছাড়ে বাসগুলো। কলাবাগান, ফকিরাপুল ও কমলাপুর থেকে ছাড়ে বাসগুলো। ভাড়া ৩০০-৩৫০ টাকা।
কোথায় থাকবেন :বান্দরবানে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো পর্যটন মোটেল (০৩৬১-৬২৭৪১), মেঘলা টুরিস্ট রিসোর্ট (০৩৬১-৬২৫০৬), গাইড ট্যুরসের হলিডে রিসোর্ট শহরের বাইরে মিলনছড়িতে, ঢাকার এই নম্বরে ৯৮৮৬৯৮৩ বুকিং দেওয়া যায়। খাগড়াছড়ি :চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ১২২ কিলোমিটার দূরে খাগড়াছড়ি জেলা। চারিদিকে পাহাড়ের মাঝে অনেকটা সমতলে এর জেলা শহর। শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পশ্চিমে মহাসড়কের পাশেই রয়েছে আলুটিলা পাহাড়। প্রায় এক হাজার ফুট উঁচু এ পাহাড়ের চূড়ায় দাড়ালে পুরো খাগড়াছড়ি শহরকে পাখির চোখে দেখা যায়। আলুটিলা পাহাড়ের আরেকটি আকর্ষণীয় জায়গা হলো—এর প্রাচীন একটি গুহাপথ। গুহার ভেতর দিয়ে বয়ে চলছে শীতল জলধারা। শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে মনোরম এক প্রাকৃতিক ঝরনা রিছং। বিশাল পাথুরে জায়গার এক প্রান্ত থেকে অঝোরে বইছে রিছং জলপ্রপাত।
কীভাবে যাবেন :ঢাকা থেকে সরাসরি খাগড়াছড়ি যায় এস আলম, সৌদিয়া এবং শান্তি পরিবহনের নন-এসি বাস।  ভাড়া ৩০০-৩৫০ টাকা। ঢাকার কলাবাগান, ফকিরাপুল ও কমলাপুর থেকে প্রতিদিন সকাল এবং রাতে ছাড়ে বাসগুলো।
কোথায় থাকবেন :খাগড়াছড়িতে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো মানের হোটেল হলো বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেল (০৩৭১-৬২০৮৪-৮৫)।
প্যাকেজে ভ্রমণ :সব ঝামেলা এড়িয়ে যারা ভ্রমণ করতে চান তারা কোনো ভ্রমণ সংস্থার সহায়তা নিতে পারেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়মিত প্যাকেজ ভ্রমণ পরিচালনা করে থাকে এমন কয়েকটি ভ্রমণ সংস্থা হলো :গাইড ট্যুরস লিমিটেড, বাড়ি-১৪২, রোড-১২, ব্লক-ই, বনানী, ঢাকা। ফোন :৯৮৮৬৯৮৩, ৯৮৬২২০৫। গ্যালাক্সি হলিডেজ, তাজ ক্যাসেলিনা, ২৫ গুলশান এভিনিউ, ঢাকা। ফোন :৯৮৮৮০৫৫।

আলোকচিত্র ও লেখা: মুস্তাফিজ মামুন

No comments:

Post a Comment