Pages

Sunday, July 29, 2012

সবুজ ছায়ার শ্রীমঙ্গল


Details
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি চা বাগান মৌলভীবাজার জেলায়। আর মৌলভীবাজারের সব আকর্ষণীয় চা বাগানগুলো এ জেলার শ্রীমঙ্গলে। বর্ষা শেষে সবুজ সতেজ চা বাগানে বেড়ানোর মজাই আলাদা। এই সময়ে তাই দু-একদিনের সময় হাতে নিয়ে চলুন যাই শ্রীমঙ্গলে। 
শ্রীমঙ্গলে এসে প্রথমেই দেখুন চা বাগান। মাইলের পর মাইল এখানে রয়েছে বিস্তীর্ণ বাগান। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর সময় চারিদিকে চোখে পড়বে শুধুই চা বাগান আর চা বাগান। পছন্দসই যে কোনো বাগানে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে দেখতে পারেন। চা পাতা তোলার মৌসুম এখন শেষের দিকে। কোনো কোনো বাগানে চা বাগানের শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা তাই চোখে পড়তে পারে।
চা বাগান দেখে চলুন দেশের একমাত্র চা গবেষণা ইনস্টিটিউটটি (বিটিআরআই) শ্রীমঙ্গল শহরের পাশেই। বিশাল চা বাগানের মাঝে বিটিআরআই-এর ক্যাম্পাসটি সবারই ভালো লাগবে। এখানে আছে চা পরীক্ষার ল্যাবরেটরি, বিটিআরআই উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রজাতির চা গাছ, ভেষজ উদ্ভিদের বাগান, পুরোনো চা গাছ। তবে এসব দেখতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে।
শ্রীমঙ্গল শহরের পাশেই রয়েছে চা শ্রমিক রমেশের জাদুকরী চায়ের দোকান নীলকণ্ঠ কেবিন। দুই রং থেকে শুরু করে পাঁচ রঙের চায়ের জন্য বিখ্যাত এ কেবিন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় পর্যটকদের ভিড় লাগে এখানে। স্বাদে খুব একটা মজাদার না হলেও গোপন কক্ষে বসে তৈরি করা রমেশ বাবুর এ চা পরখ করে দেখতে পারেন।  
শ্রীমঙ্গল শহর ছেড়ে কমলগঞ্জের পথে প্রায় আট কিলোমিটার গেলে গভীর এক জঙ্গলে ঢুকে পড়তে পারেন। এটি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। প্রায় ১২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে এ উদ্যানে রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, চার প্রজাতির উভচর, ছয় প্রজাতির সরীসৃপ, বিশ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ২৪৬ প্রজাতির পাখি। প্রধান সড়ক ফেলে কিছুদূর চলার পরে ঢাকা-সিলেট রেল লাইন। এর পরেই মূলত জঙ্গলের শুরু। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের অন্যতম আকর্ষণ হলো উল্লুক, চশমা বানর, মুখপোড়া হনুমান, লজ্জাবতী বানর ইত্যাদি। উদ্যানে বেড়ানোর তিনটি ট্রেকিং পথ আছে। একটি তিন ঘণ্টার, একটি দু ঘণ্টার এবং অন্যটি এক ঘণ্টার পথ। উদ্যানের ভেতরে একটি খাসিয়া পল্লীও আছে। এ পল্লীরর খাসিয়া তরুণ-তরুণীরা উদ্যানে আগত দর্শনার্থীদের গাইডও করে থাকেন। প্রবেশপথে উদ্যানের কার্যালয় থেকে এরকম কোনো গাইড নিয়েই জঙ্গল ট্রেকিংয়ে যাওয়া উচিত। নয়তো পথ হারানোর ভয় আছে।
কীভাবে যাবেন :ঢাকা থেকে রেল ও সড়ক পথে শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ (০১৭১১৯২২৪১৭), শ্যামলী পরিবহন (০১৭১১৯৯৬৯৬৫), সিলেট এক্সপ্রেস (০১৭১৩৮০৭০৬৯), টি আর ট্রাভেলস (০১৭১২৫১৬৩৭৮) ইত্যাদি বাস যায় শ্রীমঙ্গল। ভাড়া নন এসি বাসে ৩০০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনেও যাওয়া যায় শ্রীমঙ্গল। ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, দুপুর ২টায় প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০টায় ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া এসি বার্থ ৫২৬ টাকা, এসি সিট ৩৪৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী বার্থ ৩০০ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ২০০ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণী ৩৪৫ টাকা, শোভন চেয়ার ১৩৫ টাকা, শোভন ১১০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টায় উদয়ন এক্সপ্রেস।
কোথায় থাকবেন :শ্রীমঙ্গলে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো মানের জায়গা ভানুগাছ রোডে টি রিসর্ট (০৮৬২৬-৭১২০৭, ০১৭১২৯১৬০০১, ০১৭১২০৭১৫০২)। এ ছাড়া শ্রীমঙ্গলের অন্যান্য হোটেল হলো হবিগঞ্জ সড়কে টি টাউন রেস্ট হাউস (০৮৬২৬-৭১০৬৫), কলেজ রোডে হোটেল প্লাজা (০৮৬২৬-৭১৫২৫)। এ ছাড়াও শহরে সাধারণ মানের কিছু আবাসিক হোটেল আছে। এসব হোটেলের কক্ষ ভাড়া ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। শ্রীমঙ্গল শহরে খাবার জন্য সবচেয়ে ভালো রেস্তোরাঁ   হলো কুটুমবাড়ি। এখানকার খাবারের মান বেশ ভালো, তবে দামটাও একটু বেশি।

আলোকচিত্র ওলেখা: মুস্তাফিজ মামুন

No comments:

Post a Comment