চট্টগ্রাম জেলার লোহাগড়া উপজেলায়
অবস্থিত চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশেই এ বনাঞ্চলের অবস্থান। ছোট-বড় পাহাড়ের ঢালে ঢালে চিরসবুজ এ বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রমে ভ্রমণ যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমীর কাছেই উপভোগ্য হবে।
চুনতি অভয়ারণ্য
১৯৮৬ সালে লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, চকরিয়া এলাকার সাতটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের প্রায় ১৯ হাজার ১৭৭ একর জায়গা নিয়ে ঘোষণা করা হয় চুনতি সংরক্ষিত এলাকা। ২০০৩ সালে চুনতি অভয়ারণ্যে বন বিভাগের দুটি রেঞ্জ কার্যালয় স্থাপন করা হয়, যার একটি চুনতি রেঞ্জ। এ রেঞ্জের অধীনে আছে বনবিভাগের তিনটি বিট কার্যালয়।
প্রায় ৪৭৭ প্রজাতির বার লাখেরও বেশি গাছ রয়েছে এ বনে, যার মধ্যে প্রায় ১৫ প্রজাতির গাছ ইতিমধ্যেই বিলীন হয়ে গেছে। এ বনে রয়েছে বেশ কিছু শতবর্ষী গর্জন গাছ। এ ছাড়াও শাল, সেগুন, আকাশমণি, গর্জন, বট, হারগোজা, চাঁপালিশ, হরিতকি, বহেরা, বাঁশ, আসাম লতা, ছন প্রভৃতি উদ্ভিদ বেশি দেখা যায়।
বন্য হাতিসহ নানান প্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। চুনতি বনে সাধারণত দেখা মেলে লালমুখো বানর, মুখপোড়া হনুমান, খেঁকশিয়াল, সজারু, মায়াহরিণ, বন্যশুকর, শিয়াল, নানা রকম গিরগিটি ইত্যাদি। এ ছাড়া এ বনের শাপের মধ্যে কালান্তর, দাঁড়াশ, গোখরা, অজগর, লাউডগা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
নানান জাতের পাখিরও অভয়াশ্রম এ বনাঞ্চল। এ বনের বাসিন্দা উল্লেখযোগ্য পাখপাখালি হলো—বন মোরগ, লাল মৌটুসি, নীলকণ্ঠী, পাহাড়ি ময়না, মথুরা, ঘুঘু, ফিঙে, কাঠঠোকরা, ধনেশ, টিয়া, বুলবুলি ইত্যাদি।
ভ্রমণস্থল
বেশ কিছু নির্দিষ্ট ভ্রমণস্থান আছে চুনতি অভয়ারণ্যে। এগুলোতে পর্যটকরা খুব সহজেই বেড়িয়ে আসতে পারেন।
জাঙ্গালিয়া ট্রেইল
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়া থেকে শুরু এ পায়ে হাঁটা পথটির। প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এ ট্রেইলটির নাম জাঙ্গালিয়া ফুট ট্রেইল। এ পথে চলতে চলতে দেখা মিলবে বেশ পুরোনো গর্জন গাছ, বাঁশ ঝাড়সহ নানান জাতের গাছ পালা। এ পথে রয়েছে কয়েকটি পর্যবেক্ষণকেন্দ্র। ভাগ্য সহায় হলে এ পথে দেখা মিলতে পারে বন্য হাতিরও। এ ছাড়া এখানে আছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এ জায়গার জঙ্গলটি বেশ সাজানো ছবির মতো।
প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র
চুনতি অভয়ারণ্যে রয়েছে দোতলা একটি প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র। চুনতি অভয়ারণ্য সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা মিলবে এখানে গেলে। বন্যপ্রাণী সম্পর্কে নানান তথ্য আর ছবি মিলবে এখানে।
বনপুকুর ট্রেইল
চুনতি অভয়ারণ্যের এ পায়ে হাঁটার পথটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের
লোহাগাড়ায় বনপুকুর থেকে শুরু। প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ এ ট্রেইলটিও ছবির মতো সুন্দর। বেশ কয়েকটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র আর বিশ্রামস্থল আছে এ পথে। এ পথেও দেখা মিলতে পারে বন্যহাতিসহ নানা বন্যপ্রাণীর।
কীভাবে যাবেন
ঢাকার ফকিরাপুল, কমলাপুর, সায়দাবাদ ইত্যাদি জায়গা থেকে কক্সবাজারগামী বাসে চড়ে নামতে হবে লোহাগড়া বাজার বাস স্টেশনে। বাজার থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার ভেতরে চুনতি যেতে হবে থ্রি হুইলারে। ঢাকা-কক্সবাজারের পথে গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, সোহাগ, হানিফ, টিআর ইত্যাদি পরিবহন সংস্থার তাপনিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল বাস চলাচল করে। ভাড়া ১১৫০ টাকা ১৬৫০ টাকা। এ ছাড়া এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী, ইউনিক, ঈগল, হানিফ ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসও চলে এ পথে। ভাড়া ৬০০-৭৫০ টাকা। এ ছাড়া চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ও অক্সিজেন থেকেও কক্সবাজারের বাসে চড়ে লোহাগড়া নামতে পারেন। ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
ছাত্র, গবেষক ও পর্যটকদের জন্য চুনতি বিট কার্যালয়ে রয়েছে স্টুডেন্ট ডরমেটরি। এ ছাড়া বন বিভাগ ও জেলা পরিষদের বিশ্রামাগারও আছে জায়গাটিতে। তবে সেখানে অবস্থান করতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে। লোহাগড়া বাজারে রাত যাপন করার জন্য সাধারণ মানের দু’একটি হোটেল আছে। এসব হোটেলে কক্ষ ভাড়া ১০০-৩০০ টাকা।
প্রয়োজনীয় তথ্য
চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে প্রবেশ মূল্য বাংলাদেশিদের জন্য দশ টাকা আর বিদেশি নাগরিকদের জন্য তিন আমেরিকান ডলার বা সমপরিমাণের বাংলাদেশি টাকা পরিশোধ করতে হয়। জায়গাটিতে ভ্রমণ করতে কোনো ইকো গাইডের সহায়তা নিতে পারেন।
চুনতি অভয়ারণ্যে ভ্রমণকালীন নীরবতা অবলম্বন করুন। বনের মধ্যে ধূমপান করবেন না। প্লাস্টিক জাতীয় কোনো প্যাকেট, বোতল জঙ্গলে ফেলবেন না।
আলোকচিত্র :www.bengalpixbd.com
লেখক: লেখা মুস্তাফিজুর রহমান | শুক্রবার, ২৭ জুলাই ২০১২, ১২ শ্রাবণ ১৪১৯
No comments:
Post a Comment