সুন্দরবনের পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের অধীনে করমজল পর্যটন কেন্দ্র। নদীপথে খুলনা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার এবং মংলা থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে এ পর্যটন কেন্দ্রটির অবস্থান। একটি ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র ছাড়াও এখানে আছে হরিণ ও কুমির প্রজনন ও লালন-পালন কেন্দ্র। দিনে দিনে যারা সুন্দরবন ভ্রমণ করতে চান তাদের জন্য আদর্শ জায়গা এটি।
মংলা থেকে ইঞ্জিন নৌকায় চড়লে করমজলের জেটিতে পৌঁছা যাবে এক থেকে দেড় ঘণ্টায়। পর্যটন কেন্দ্রটির শুরুতেই মাটিতে শোয়ানো বিশাল আকৃতির মানচিত্র সুন্দরবন সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেবে। মানচিত্রটিকে পেছনে ফেলে বনের মধ্যে দক্ষিণে চলে গেছে আঁকাবাঁকা কাঠের তৈরি হাঁটা পথ। পথটির নাম মাঙ্কি ট্রেইল। এই নামের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায় ট্রেইলে পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই। পুরো ট্রেইলজুড়েই দেখা মিলবে সুন্দরবনের অন্যতম বাসিন্দা রেসাস বানরের। পথের দুই ধারে ঘন জঙ্গল। এ বনে বাইন গাছের সংখ্যা বেশি। কাঠের পথটি কিছু দূর যাবার পরে হাতের বাঁয়ে শাখা পথ গিয়ে থেমেছে পশুরের তীরে। শেষ মাথায় নদীর তীরে বেঞ্চ পাতা শেড। মূল পথটি আরও প্রায় আধা কিলোমিটার দক্ষিণে গিয়ে ছোট খালের পাড়ে থেমেছে। পথের মাথায় এখানেও গোলপাতার ছাউনি দেওয়া আরও একটি শেড। সেখান থেকে পশ্চিমমুখী ইট বাঁধানো একটি সরু পথ চলে গেছে বনের ভেতর। আগেই বলা হয়েছে, কাঠের পথটি চলতে চলতে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়বে বানরদের চঞ্চলতা। এখানকার বানরেরা পর্যটকদের খুব কাছাকাছি চলে আসে। তবে ওদের বিরক্ত করতে নেই। তাহলে চড়াও হয়ে বসতে পারে যে কারও উপরে।
কাঠের তৈরি ট্রেইলে ভ্রমণ শেষে এবার একই পথে ফিরে আসুন মাঙ্কি ট্রেইলের প্রবেশ পথের গোড়ায়। সেখান থেকে সামান্য পশ্চিম দিকে হরিণ ও কুমিরের প্রজনন কেন্দ্র। শুরুতেই চোখে পড়বে চিড়িয়াখানার মতো খাঁচায় ঘেরা খোলা জায়গা। ভেতরে কতগুলো চিত্রা হরিণ। খাঁচার ভেতরে পশ্চিম কোণে ছোট আরেকটি খাঁচা। ভেতরে কয়েকটি রেসাস বানর। সামনেই ছোট ছোট অনেকগুলো চৌবাচ্চা। কোনোটিতে ডিম ফুটে বের হওয়া কুমির ছানা, কোনোটিতে মাঝারি আকৃতির আবার কোনোটিতে আরও একটু বড় বয়সের লোনা জলের কুমিরের বাচ্চা। একেবারে দক্ষিণ পাশে দেয়াল ঘেরা বড় পুকুরটিতে বয়সী কুমিরের আবাস। পুকুরের পশ্চিম পাশের দেয়ালের বাইরে ছোট্ট একটি ওয়াচ টাওয়ার, উপর থেকে এসব দেখবার জন্য।
কীভাবে যাবেন
ঢাকার সায়দাবাদ বাস স্টেশন থেকে সরাসরি মংলা যায় সুন্দরবন ও পর্যটক সার্ভিসের বাস। ভাড়া ৩০০-৩৫০ টাকা। মংলা থেকে ইঞ্জিন নৌকায় চড়ে যেতে হবে করমজল। দশ জনের উপযোগী একটি ইঞ্জিন নৌকার যাওয়া আসার ভাড়া ১০০০-১২০০ টাকা। এসব ইঞ্জিন নৌকাগুলো সাধারণত ছাড়ে মংলা ফেরিঘাট থেকে।
কোথায় থাকবেন
মংলায় থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল পশুর (০৪৬৬২-৭৫১০০)। এখানকার নন-এসি দ্বৈত কক্ষ ৯০০ টাকা এবং এসি দ্বৈত কক্ষ ১৬০০ টাকা। এ ছাড়াও মংলা শহরে সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। এসব হোটেলে ১০০-৬০০ টাকায় কক্ষ পাওয়া যাবে।
প্রয়োজনীয় তথ্য
করমজলে দেশি পর্যটকের জন্য প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা আর বিদেশিদের জন্য ২০০ টাকা। করমজল যেতে হবে পশুর নদী হয়ে। এটি সব সময়ই কম-বেশি উত্তাল থাকে। তাই ভালো দেখে ইঞ্জিন নৌকা নিন। আগেই নিশ্চিত হয়ে নিন নৌকায় পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট আছে কি না। বন রক্ষী ছাড়া জঙ্গলের ভেতরে ঢুকবেন না। হরিণ ও কুমির প্রজনন কেন্দ্রের কোনো প্রাণীকে খাবার দিবেন না। তাহলে কিন্তু জরিমানা গুণতে হবে।
আলোকচিত্র ও লেখা মুস্তাফিজ মামুন
No comments:
Post a Comment