Pages

Friday, July 27, 2012

রামসাগর জাতীয় উদ্যান


Details
বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট জাতীয় উদ্যান রামসাগর। উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর জেলা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জাতীয় এ উদ্যানটি। আকারে ছোট হলেও সৌন্দর্য আর বৈচিত্র্যে এ উদ্যানটির তুলনা নেই। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দিঘি রামসাগরকে ঘিরেই এ উদ্যান।
রামসাগর জাতীয় উদ্যান দিনাজপুরের আউলিয়াপুর ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামে অবস্থিত। দিঘিটির খননকাল ছিল ১৭৫০-১৭৫৫ সাল। সেসময়ে এ অঞ্চলে প্রচণ্ড খরা আর দুর্ভিক্ষ চলছিল। তাই প্রজাদের সেচ সুবিধা, জলকষ্ট দূরীকরণ আর খাদ্যাভাব পূরণের লক্ষ্যে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে রাজা রামনাথ এ দিঘি খনন করেন এবং নিজের নামেই এর নামকরণ করেন। জনশ্রুতি আছে, সে সময় দিঘিটি খনন করতে রাজা রামনাথের ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৩০,০০০ টাকা। মূল দিঘি অর্থাত্ জলভাগের দৈর্ঘ্য ১০৩১ মিটার আর প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। তবে পুরো রামসাগর জাতীয় উদ্যানের আয়তন প্রায় ২৭ হেক্টর।
রামসাগর বনবিভাগের দায়িত্বে আসে ১৯৬০ সালে। এরপরে ১৯৯৫-৯৬ সালে সরকার এটিকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল রামসাগর এলাকাকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
রামসাগর দিঘি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা আকৃতির। দিঘিটির উত্তরের দিকটি অপেক্ষাকৃত বেশি গভীর। বেশ কয়েকটি পাকা ঘাট থাকলেও প্রধান ঘাটটি পশ্চিম পাড়ের ঠিক মাঝ বরাবর অবস্থিত। প্রায় ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬০ ফুট প্রস্থ এ ঘাটটি। দিঘির উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব পাশেও একটি করে ছোট ঘাট রয়েছে।
দিঘিটির চারপাশে গাছে গাছে ঢাকা ইট বাঁধানো পথ আর ছোট ছোট কয়েকটি টিলা। রামসাগর দিঘির পশ্চিম পাশে ছোট্ট একটি চিড়িয়াখানা আছে।
দিঘির উত্তর দিকে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত লাল ইটের একটি প্রাচীন স্থাপনা দেখা যায়। এটি নিয়ে নানা কথা প্রচলিত আছে স্থানীয়দের কাছে। কারও মতে এটি একটি মন্দির আবার কারও মতে এটি একটি বিশ্রামাগার।
নানা রকম গাছপালাসমৃদ্ধ জাতীয় এ উদ্যানের দেখা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। শীতে এ জায়গাটি প্রচুর অতিথি পাখির মিলনমেলায় পরিণত হয়।
রামসাগর জাতীয় উদ্যানের কিউরেটর এ কে এম আব্দুস সালাম জানালেন, রামসাগর জাতীয় উদ্যান দিনাজপুরের একটি নিরাপদ পর্যটন কেন্দ্র। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী জায়গাটিতে ভ্রমণে আসেন।
প্রয়োজনীয় তথ্য
প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে রামসাগর জাতীয় উদ্যান। এখানে প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২ টাকা। নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করে গাড়ি নিয়েও জায়গাটিতে প্রবেশ করা যায়। রামসাগরে বাহনের প্রবেশ মূল্য রিকশা ৫ টাকা, কার বা জিপ ৩৫ টাকা, সাধারণ মাইক্রোবাস ৬০ টাকা, বড় মাইক্রোবাস ৭৫ টাকা। নিজস্ব বাহন না থাকলে দিনাজপুর শহর থেকে ব্যাটারি চালিত রিকশায় রামসাগর আসতে সময় লাগে প্রায় ত্রিশ মিনিট। ভাড়া ১০০-১৫০ টাকা। 
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে দিনাজপুরগামী বাসগুলো সাধারণত ছাড়ে গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে। এ পথে নাবিল পরিবহনের এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া ৯০০ টাকা। এ ছাড়া হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এস আর ট্রাভেলস, কেয়া পরিবহন, এস এ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, নাবিল পরিবহনের নন-এসি বাসও চলাচল করে এ পথে। ভাড়া ৫০০-৫৫০ টাকা।  ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেন দ্রুতযান এক্সপ্রেস ছাড়ে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে। আর আন্তঃনগর একতা এক্সপ্রেস ছাড়ে সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে। ঢাকা থেকে একতা ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস বন্ধ থাকে যথাক্রমে মঙ্গল ও বুধবার। ভাড়া শোভন সিট ১৮৫ টাকা, শোভন চেয়ার ২৫০, প্রথম শ্রেণি চেয়ার ৩৫০, প্রথম শ্রেণি বার্থ ৫৩৫, এসি চেয়ার ৬১৮, এসি বার্থ ৮৯৭ টাকা। দিনাজপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে দ্রুতযান এক্সপ্রেস ছাড়ে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে আর একতা এক্সপ্রেস ছাড়ে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে। দিনাজপুর থেকে একতা ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস বন্ধ থাকে যথাক্রমে সোমবার ও বুধবার।
কোথায় থাকবেন
রামসাগরে বনবিভাগের একটি বিশ্রামাগার থাকলেও সাধারণ পর্যটকদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা নেই। রামসাগর ভ্রমণে গেলে তাই থাকতে হবে দিনাজপুর শহরে। দিনাজপুর শহরে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল হচ্ছে পর্যটন মোটেল (০৫৩১-৬৪৭১৮)। এ ছাড়া ঢাকায় পর্যটনের প্রধান কার্যালয় থেকেও এ মোটেলের বুকিং দিতে পারেন। ফোন :৯৮৯৯২৮৮-৯১ । দিনাজপুরের পর্যটন মোটেলে এসি টুইনবেড ১৫০০ টাকা এবং এসি টুইনবেড ডিলাক্স কক্ষ ১৮০০ টাকা। এ ছাড়া দিনাজপুরের অন্যান্য সাধারণ মানের হোটেলে ১০০-১২০০ টাকায় রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা আছে। কয়েকটি সাধারণ মানের হোটেল হলো—মালদহ পট্টিতে হোটেল ডায়মন্ড (০৫৩১-৬৪৬২৯),  নিমতলায় হোটেল আল রশিদ (০৫৩১-৬৪২৫১), হোটেল নবীন (০৫৩১-৬৪১৭৮),  হোটেল রেহানা (০৫৩১-৬৪৪১৪), নিউ হোটেল (০৫৩১-৬৮১২২)।

লেখক: মোস্তাফিজুর রহমান l  |  শুক্রবার, ২৭ জুলাই ২০১২, ১২ শ্রাবণ ১৪১৯

No comments:

Post a Comment