Pages

Sunday, August 5, 2012

চট্টগ্রামের পথে পথে

chittagong
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রাম। পাহাড় আর সমুদ্রের মিতালী করা এই শহরে দর্শনীয় স্থানের কমতি নেই। দেশের বৃহত্তম সমুদ্রবন্দরও এ শহরেই। দু’একদিন সময় নিয়ে বেরুলেই এই শহরের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখা সম্ভব। চট্টগ্রাম শহরের দর্শনীয় স্থানগুলো নিয়ে কড়চার এবারের আয়োজন-
চট্টগ্রাম গেটঃ চট্টগ্রাম শহরের শুরুতেই কর্নেলহাটে রয়েছে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি চট্টগ্রাম গেট। লাল ইট আর শ্বেত পাথরে তৈরি শহরেও প্রবেশের প্রধান তোরণটির মূল নাম একে খান গেট।
ফয়’স লেকঃ শহরের পাহাড়তলীতে রয়েছে ঐতিহাসিক ফয়’স লেক। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিনশ ফুট উঁচু এ লেকে বছরের সবসময়ই কানায় কানায় জলে পূর্ণ থাকে। চারিদিকে ছোট ছোট অসংখ্য পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে ছড়িয়ে আছে এই লেকের জলরাশি। আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃক ১৯২৪ সালে প্রায় ৩৩৬ একর জায়গায় কৃত্রিম এ হ্রদটি খনন করা হয়। বর্তমানে ফয়’স লেকের সাথে সঙ্গতি রেখে সেখানে কনকর্ড গড়ে তুলেছে এমিউজমেন্ট পার্ক। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সেখানে এখন রয়েছে আধূনিক মানের বিভিন্ন রাইডস। ফয়’স লেকের প্রবেশমুখেই রয়েছে চট্টগ্রাম চিড়িয়া খানা। নানা ধরণের প্রাণী রয়েছে ছোট এই চিড়িয়াখানাটিতে।
ফিরোজশাহ লেকঃ পাহাড়তলীর ফিরোজশাহ কলোনীর পাশেই রয়েছে এ লেকটি। ফয়’স লেক খননের প্রায় চার বছর পূর্বে অর্থাৎ ১৯২০ সালে এ লেকটিও খনন করে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে বিল্ডিংঃ শহরের সিআরবি এলাকায় পাহাড়ের উপরে রয়েছে লাল ইটে তৈরি প্রাচীন একটি সুরম্য স্থাপনা। এ অঞ্চলের রেলওয়ের প্রধান দপ্তর হিসেবে এখনও এটি ব্যবহৃত হচ্ছে।
কোর্ট বিল্ডিংঃ লালদীঘি এলাকায় পরীর পাহাড়ে আছে ঐতিহাসিক কোর্ট বিল্ডিং। আঁকা বাঁকা পাহাড়ি পথ ভেঙ্গে উপরে উঠলেই দেখতে পাবেন প্রাচীন এই ভবনটি। তবে ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি দিন দিন হারাতে বসেছে তার জৌলুস। একে সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করে এর কোন কোন অংশ ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও নির্মাণ করা হয়েছে নতুন স্থাপনা।
লালদীঘিঃ কোর্ট বিল্ডিং এর কাছেই রয়েছে ঐতিহাসিক লালদীঘি। লালদীঘি নামের পেছনে ছোট্ট একটি ইতিহাস রয়েছে লোক মুখে। এই জায়গায় অনেক আগে ছিল ছোট্ট একটি জলাশয়। ব্রিটিশ শাসনামলের শুরুতে এই জলাশয় খনন করে রূপ দেয়া হয় দীঘিতে। দীঘির পাড়ে ছিল বড় বড় কৃষ্ণচূড়া গাছ। ফুল ফোটার মৌসুমে ফুলে ফুলে লাল হয়ে যেত দীঘির পাড়। সম্ভবত সেজন্যই এর নাম হয়েছে লালদীঘি। আবার অনেকের মতে দীঘির পূর্ব দিকে তৎকালীন সময়ে যে ম্যাজিস্ট্রেট কোট এবং ট্রেজারি বিল্ডিং ছিল দুটোরই রঙ ছিল লাল। এর পাশেই ছিল জেলখানা। তার রঙও ছিল লাল। সে সময়ে জেলখানাকে বলা হতো লালঘর। একারণেই হয়তো এ দীঘির নাম হয়েছে লালদীঘি। দীঘির উত্তর পাশে আছে জমিদার রায় বাহাদুরের স্মৃতিস্তম্ভ। লালদীঘির পাশেই রয়েছে ঐতিহাসিক লালদীঘির ময়দান।
ওয়ার সিমেট্রিঃ শহরের গোল পাহাড়েরর মোড় থেকে একটু সামনেই আছে রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ওয়ার সিমেট্রি বা কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দেয়া ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, ভারত, মিয়ানমার, পূর্ব এবং পশ্চিম আফ্রিকা, নেদারল্যান্ড ও জাপানের সাতশ সৈনিকের সমাধি আছে এই জায়গাটিতে। দুই ঈদ ছাড়া সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারা বছরই খোলা থাকে এ জায়গাটি।
জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরঃ শহরের আগ্রাবাদ এলাকায় রয়েছে চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর। জাপানের টোকিওর পরে এশিয়ায় এ ধরণের জাদুঘরের দ্বিতীয়টি হলো এটি। এখানে আছে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর জীবনচিত্র, সংস্কৃতি ও জীবনের নানান দিকের চমৎকার উপস্থাপন।
শাহ আমানত (র) মাজারঃ শহরের লাল দীঘির পূর্ব পাশে রয়েছে এ অঞ্চলের বিখ্যাত দরবেশ শাহ আমানত (র) মাজার। ধারণা করা হয় অস্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে বিহার থেকে তিনি চট্টগ্রামে আসেন। এখানে তিনি ছোট একটি কুঁড়ে ঘরে থাকতেন এবং জজ কোর্টে পাখা টানার চাকরি করতেন।
বায়েজীদ বোস্তামী (র) মাজারঃ শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটি সড়কের পাশে নাসিরাবাদ এলাকায় রয়েছে হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (র:) মাজার। প্রতিদিন শত শত ধর্মপ্রাণ মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকে এ জায়গাটি।
পাথরঘাটাঃ চট্টগ্রামের প্রধান মৎস্য বন্দর। সমুদ্র থেকে মাছ ধরার ট্রলারগুলো এসে নোঙ্গর করে এখানেই। বিভিন্ন রকম সামুদ্রিক মাছের পসরা দেখতে হলে যেতে হবে এ জায়গাটিতে।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতঃ শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। এখানে দাঁড়িয়ে বহির্নোঙ্গরে অপেক্ষমান জাহাগুলোকে সন্ধ্যার পরে দেখা যায় সমুদ্রের মাঝে একটি আলো ঝলমলে শহরের মতো। বন্দর রোড ধরে গেলে নতুন এয়ারপোর্ট এলাকাটিও ঘুরে দেখে আসতে পারেন। এয়ারপোর্টের সামনে কর্ণফুলী নদীর দৃশ্যটাও মনোহর। শহর থেকে পতেঙ্গার বেবিটেক্সি ভাড়া ১০০ টাকা। বাস কিংবা টেম্পুতে গেলে ভাড়া লাগবে ৩০-৩৫ টাকা।
কিভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশ পথে যেতে পারেন চট্টগামে। সড়কপথে গ্রীনলাইন, সোহাগ, সৌদিয়া, এস আলম ইত্যাদি পরিবহনের বিলাসবহুল বাস চলাচল করে এ পথে। ভাড়া ৬০০-৬৭৫ টাকা। আর গ্রীন লাইন, এস আলম, সৌদিয়া, ইউনিক, শ্যামলী ইত্যাদি পরিবহনের সাধারণ মানে বাসে ভাড়া ৩০০-৩৫০ টাকা। রেল পথে ঢাকা- চট্টগ্রামের পথে মহানগর প্রভাতী ঢাকা ছাড়ে সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটে, মহানগর গোধূলি ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৩ টায়, সুবর্ণ এক্সপ্রেস ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৪ টা ২০ মিনিটে, তূর্ণা ঢাকা ছাড়ে রাত এগারোটায়। এছাড়া ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান, ইউনাইটেড এয়ার এবং জিএমজির বিমান চলাচল করে এ পথে।
কোথায় থাকবেনঃ চট্টগ্রাম শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের প্রচুর হোটেল আছে। এখানে কয়েকটি হোটেলের যোগাযোগের ঠিকানা দেয়া হলো। শহরের আগ্রাবাদ এলাকায় হোটেল আগ্রাবাদ, ফোন- ৭১৩৩১১-৮। হোটেল পেনিনসুলা, ফোন- ৬১৬৭২২, ৬১৯৮৫০। স্টেশন রোডে হোটেল এশিয়ান, ফোন- ২৮৫০৩৪৬-৮। পাঁচলাইশ এলাকায় রওশন বোর্ডিং, ফোন- ৬৫১৪১৬। জুবিলী রোডে হোটেল টাওয়ার ইন, ফোন- ৮৪২৬৯১-২।
আলোকচিত্র ও লেখা মুস্তাফিজ মামুন
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, এপ্রিল ০৬, ২০১০

এই গরমে কুয়াকাটা

kuakanta
বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলে সাগরকন্যাক্ষ্যাত মনোরম একটি ভ্রমণ স্বর্গ কুয়াকাটা। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার অন্তর্গত লতাচাপালী ইউনিয়নে অসাধারণ এ সমুদ্র সৈকতটির অবস্থান। কুয়াকাটার ঠিক পূর্বেই রয়েছে গঙ্গামতির বা গজমোতির সংরক্ষিত বনাঞ্চল, পশ্চিমে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল উত্তরে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মাছের বাণিজ্য কেন্দ্র আলীপুর। সাগরের বুকে এখান থেকেই সূর্যোদয় এবং সূর্যাচ্চের মনোরম দৃশ্য দেখা যায় বলে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের বিবেচনায় দেশের অন্যান্য সমুদ্র সৈকত থেকে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। কুয়াকাটার নামকরণ নিয়ে রয়েছে মজার ইতিহাস। ১৭৮৪ সালে বর্মী রাজা রাখাইনদের মাতৃভূমি আরাকান দখল করলে বহু রাখাইন আরাকান ছেড়ে নৌকাযোগে অজানার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। চলতে চলতে তারা বঙ্গোপসাগরের তীরের রাঙ্গবালি দ্বীপ খুঁজে পেয়ে সেখানে বসতি স্থাপন করে। সাগরের লোনা পানি ব্যবহারের অনুপযোগী বলে মিষ্টি পানির জন্য তারা এখানে একটি কূপ খনন করে এবং এ স্থানের নাম দেয় কুয়াকাটা। কুয়াকাটা ভ্রমণের আদ্যোপান্ত নিয়ে কড়চার এবারের বেড়ানো।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতকে বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন সৈকত বলা যায়। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এ জায়গা থেকেই সূর্যোদয় এবং সূর্যাচ্চের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। তবে সেটা সৈকতের দুই প্রান্ত থেকে। ভালোভাবে সূর্যোদয় দেখা যায় সৈকতের গঙ্গামতির বাঁক থেকে আর সূর্যাচ্চ দেখা যায় পশ্চিম সৈকত থেকে। এ সৈকতের দৈর্র্ঘ্য প্রায় আঠারো কিলোমিটার আর প্রস্থে প্রায় তিন কিলোমিটার। পুরো সৈকত ঘেঁষেই রয়েছে বিচ্চীর্ণ নারিকেল বাগান। সমুদ্র সৈকতের পূর্ব প্রান্তে রয়েছে গঙ্গামতির খাল। এর পরেই গঙ্গামতির সংরক্ষিত বণাঞ্চল। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের একেবারে পশ্চিম পাশে আছে জেলে পল্লী। মাছের শুটকি তৈরির বিশাল একটি এলাকাও আছে এখানে। এছাড়া পুরো সৈকতজুড়েই সারা বছর দেখা মিলবে মাছ শিকারীদের বিভিন্ন কৌশলে মাছ ধরার দৃশ্য। কুয়াকাটার পুরো সৈকতে বেড়ানোর জন্য রয়েছে মটর সাইকেলের ব্যবস্থা। একটি সাইকেলে দুইজন ভ্রমণ করা যায়।
কুয়াকাটার কুয়া
কুয়াকাটা নমকরণের উৎস প্রাচীন সেই কুয়াটি এখনো আছে। তবে অদূরদর্শী কুরুচিকর সংস্কারের ফলে এর সৌন্দর্য এবং প্রাচীন আদল নস্ট হয়ে গেছে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কাছেই রাখাইন আদিবাসীদের বাসস্থল কেরানিপাড়ার শুরুতেই বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে রয়েছে এই কুয়াটি।
সীমা বৌদ্ধ মন্দির
কুয়াকাটার প্রাচীন কুয়াটির সামনেই রয়েছে প্রাচীন একটি বৌদ্ধ মন্দির, নাম সীমা বৌদ্ধ মন্দির। প্রাচীন এই মন্দিরে রয়েছে প্রায় সাঁইত্রিশ মন ওজনের অষ্ট ধাতুর তৈরি ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের মূর্তি।
কেরানিপাড়া
সীমা বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে থেকেই শুরু হয়েছে রাখাইন আদিবাসীদের পল্লী কেরানিপাড়া। এখানকার রাখাইন নারীদেও প্রধান কাজ কাপড় বুনন। এদের তৈরি শীতের চাদর বেশ আকর্ষণীয়।
আলীপুর বন্দর
কুয়াকাটা থেকে প্রায় চার কিলোমিটার উত্তরে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বড় একটি মাছ ব্যবসা কেন্দ্র আলীপুর। এ বন্দর থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রলার বঙ্গোপসাগরে যায় মাছ ধরতে। আলীপুর বন্দর ঘুরে দেখতে পারেন বিভিন্ন রকম সামুদ্রিক মাছের বিশাল আয়োজন।
মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পূর্বে রাখাইন আদিবাসীদের আকেটি বাসস্থল মিশ্রিপাড়ায় রয়েছে আরেকটি বৌদ্ধ মন্দির। এ মন্দিরেই রয়েছে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মূর্তি। এখান থেকে কিছু দূরে আমখোলা পাড়ায় রয়েছে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় রাখাইন বসতি।
গঙ্গামতির জঙ্গল
কুয়াকাটা সুমুদ্র সৈকত পূব দিকে শেষ হয়েছে গঙ্গামতির খালে গিয়ে। আর এখানে শুরু হয়েছে গঙ্গামতির বা গজমতির জঙ্গল। বিভিন্ন রককম গাছপালা ছাড়াও এই জঙ্গলে দেখা মিলতে পারে বন মোরগ, বানর ও নানা রকম পাখির।
ফাতরার বন
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম প্রান্তে নদী পার হলেই সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। এরই নাম ফাতরার বন। এ জায়গাটি অবিকল সুন্দরবনের মতো হলেও হিংস্র কোন বন্যপ্রাণী নেই বললেই চলে। বন মোরগ, বানর আর বিভিন্ন রকম পাখিই এ বনে বেশি দেখা যায়। খুবই কম পরমিানে দেখা মিলে বন্য শুকরের। কুয়াকাটা থেকে ফাতরার বনে যেতে হলে লাগবে ইঞ্জিন বোট। সারা দিনের জন্য মাঝারি মানের একটি বোটের ভাড়া ১৫০০- ২০০০টাকা।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা হলো সদরঘাট থেকে লঞ্চে পটুয়াখালী। সেখান থেকে বাসে কুয়াকাটা। ঢাকা থেকে পটুয়াখালী রশুটে চলাচল করে এমভি দ্বীপরাজ, সৈকত ইত্যাদি লঞ্চ। এসব লঞ্চে প্রথম শ্রেনীর দ্বৈত কেবিনের ভাড়া ৮৫০-১০০০ টাকা। পুয়ায়াখালী বাস স্টেশন থেকে প্রতি ঘন্টায় কুয়াকাটার বাস ছাড়ে। ভাড়া ৬০-৭০ টাকা। এছাড়া ঢাকা থেকে লঞ্চে বরিশাল এসে সেখান থেকেও বাসে চড়ে কুয়াকাটা আসা যায়। ঢাকা থেকে বরিশাল ও পটুয়াখালীর লঞ্চগুলো ছাড়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায়। ঢাকা থেকে সরসরি বাসও চলে কুয়াকাটার পথে। কমলাপুর বিআরটিসি বাস স্টেশন থেকে প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় ছাড়ে সরকারী পরিবহন সংস্থার বাস। আর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে কুয়াকাটার পথে চলে সাকুরা, সুরভী, দ্রুতি ইত্যাদি পরিবহনের বাস। ভাড়া ৪৫০-৫০০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
কুয়াকাটায় থাকার জন্য এখন বেশ কয়েকটি ভালো মানের হোটেল আছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পর্যটন করপোরেশনের পর্যটন হলিডে হোমস। ফোন- ঢাকা বুকিং কার্যালয়- ৮৮১১১০৯, ৯৮৯৯২৮৮, কুয়াকাটা- ০৪৪২৮-৫৬০০৪, ১৭১-০১১৪৮৩। হোটেল স্কাই প্যালেস, ফোন- ঢাকা বুকিং কার্যালয়- ৭১০০৫৯০, ০১৭১১-৫৪২৮৮১। কুয়াকাটা ০৪৪২৮-৫৬০২৬, ০১৭২৭-০৩০২৪৮। হোটেল নীলঞ্জনা ইন্টারন্যাশনাল, ফোন- ০১৭১-৩০২৪০৮৭, ০১৭১২২২-৮১৪৪। হোটেল গোল্ডেন প্যালেস, ফোন ঢাকা বুকিং কার্যালয়-০১৭১৫০৬১২০১, কুয়াকাটা- ০৪৪২৮-৫৬০০৫, ০১৭১১-৪৪১৬২২। হোটেল সাগর কন্যা, ফোন ঢাকা বুকিং কার্যালয় ৮৩১৪০৬১, ০১৭২০২০৯০২৯, কুয়াকাটা- ০৪৪২৮-৫৬০২০, ০১৭২০২০৯০২৯। এসব হোটেলে ৫০০-২৫০০ টাকায় বিভিন্ন মানের ক আছে।
কিছু তথ্য
কুয়াকাটা ভ্রমণে যাওয়ার আগে একটি কথা জেনে যাওয়া ভালো। সুন্দর এ পর্যটন কেন্দ্রটি সরকারের কাছে বরাবরই উপেক্ষিত। তাই পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। সড়কের বেহাল দশার কারণে প্রায় আড়াই ঘন্টার এ পথটুকু পেরুতে কিছুটা দুর্ভোগের শিকার হন পর্যটকরা। তবে সাগরকন্যার সৌন্দর্য দেখার পরে সে কষ্ট অনেকের কাছেই সামান্য মনে হবে। কুয়াকাটার পাশ্ববর্তী দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখার জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বাহন মোটর সাইকেল। পাঠকদের সুধিবার জন্য কুয়াকাটার স্থানীয় দুইজন অভিজ্ঞ গাইডের ফোন নম্বর দেয়া হলো। যোগাযোগ : ০১৭২৪০৫৫৬৫৬, ০১৭২৪৫৪২১৮০।
আলোকচিত্র ও লেখা মুস্তাফিজ মামুন
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মার্চ ৩০, ২০১০

ইছামতির তীরে

ichhamati
ঢাকার কাছেই ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন স্থাপনা সমৃদ্ধ একটি জায়গা নবাবগঞ্জ। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এ জায়গাটিতে খুব অল্প সময়েই পৌঁছানো যায় ঢাকা থেকে। নবাবগঞ্জের মূল আকর্ষণ হলো এ এলাকার প্রাচীন কিছু জমিদার বাড়ি। চলুন তাহলে ঘুরে আসি নবাবগঞ্জ থেকে।
ইছামতি নদী
নবাবগঞ্জ শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে ইছামতি নদী। শহরের মহাকবি কায়কোবাদ মোড় থেকে পশ্চিম দিকে কলাকোপার। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শান্ত, স্নিগ্ধ এক নদী। নাম তার ইছামতি। ছোট বেলায় ইছামতির যে রূপের বর্ণনা পড়েছিলাম এখনও যেন তার কোনো কমতি নেই বর্তমানের ইছামতির মধ্যে।
গান্ধী মাঠ
নবাবগঞ্জের কলাকোপায় রয়েছে ঐতিহাসিক গান্ধী মাঠ। সর্বভারতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গান্ধীজি ১৯৪০ সালে এই মাঠে এসেছিলেন। তারপর থেকে এই মাঠের নাম গান্ধী মাঠ।
আর এন হাউস
গান্ধী মাঠ ফেলে কিছু দূর সামনে এগুলেই রয়েছে প্রাচীন একটি বাড়ি। এরই নাম আর এন হাউস। ইট থেকে চুন সুরকি খসে ধ্বংসের প্রহর গুনলেও এখনো সগর্বে বাড়িটি তার জৌলুস জানান দিচ্ছে। এ বাড়ির বাসিন্দা ৮৫ বছরের হরেন্দ্র কুমার সাহা জানালেন এ বাড়ির নাম আর এন হাউস। তার দাদার বাবা রাধানাথ সাহা মুর্শিদাবাদ থেকে এসে প্রায় আড়াইশ বছর আগে এ বাড়ি তৈরি করেছিলেন। চারদিকে কক্ষ ঘেরা এ বাড়ির সামনের অংশে ছিল অতিথিশালা, পেছনে অন্দর মহল এবং পাশেই মন্দির। মাঝে ছোট একটি খোলা জায়গা। বাড়ির সম্মুখভাগ বিশাল তোরণ আকৃতিতে তৈরি। আর এন হাউসের সামনে একেবারে ইছামতির তীর ঘেঁষে রয়েছে সুন্দর দোতলা একটি বাড়ি। হরেন্দ্র বাবুর বাবার ছিল লবনের ব্যবসা। লিভারপুল থেকে লবন আমদানি করতেন তিনি। সে ব্যবসার গদিঘর ছিল এ বাড়িটি।
জগবন্ধু সাহা হাউস
আর এন হাউস থেকে প্রায় এক কিলোমিটার সামনে রয়েছে আরেকটি প্রাচীন ভবন জগবন্ধু সাহা হাউস। এ বাড়ির বাসিন্দা কমলারানী জানালেন তার দাদা শ্বশুর জগবন্ধুসাহা তৈরি করেছিলেন এ বাড়ি। বিশাল আকৃতির দ্বিতল এ বাড়িটির নির্মাণশৈলী খুবই আকর্ষণীয়।
খেলারাম দাতার বাড়ি
কলাকোপা থেকে ছোট্ট একটি সড়ক চলে গেছে বান্দুরার দিকে। বান্দুরায় রয়েছে গাছগাছালিতে ঢাকা ধ্বংসপ্রায় খেলারাম দাতার বাড়ি। খেলারাম দাতাকে নিয়ে এ অঞ্চলে অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে। এরকম একটি হলো খেলারাম দাতা ছিলেন বিখ্যাত ডাকাত সর্দার। তবে তার দানের হাত ছিল বেশ বড়। সে ডাকাতি করে গরিব দুঃখীদের সাহায্য করত। তারই বাড়ি ছিল এটি। এ বাড়ি থেকে একটি সুড়ঙ্গ পথ ছিল ইছামতির পাড়ে। নদীপথে ধনসম্পদ এনে এ সুড়ঙ্গ পথেই বাড়িতে নিয়ে আসত খেলারাম দাতা। দোতলা এ বাড়ির নিচতলায় এখনো সুড়ঙ্গ পথটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। নিচতলায় অনেকগুলো কক্ষ থাকলেও এখন তার প্রায় সবই আবর্জনা আর মাটিতে ঢেকে আছে। আর দোতলায় চার পাশে ও চার কোনে চারটি করে বাংলা ঘরের আকৃতিতে এক কক্ষ বিশিষ্ট আটটি ঘর। মাঝে রয়েছে মঠ আকৃতির আরেকটি ঘর। লোকমুখে শোনা যায় এঘরে অনেক মূল্যবান মূর্তি ও ধনসম্পদ ছিল।
ব্রজ নিকেতন
বান্দুরা- দোহার সড়কের পাশেই রয়েছে প্রাচীন একটি বাড়ি দুটি সুন্দর ব্রজ নিকেতন। বাড়িটির চোখ ধাঁধানো নির্মাণশৈলী দেখে যেকোনো পথিকের পা থমকে যাবে কিছুক্ষণের জন্য হলেও। সুন্দর এ বাড়িটি ঘুরে দেখতে পারেন।
জপমালা রানীর গির্জা
বান্দুরায় আরেকটি দর্শনীয় স্থান হলো জপমালা রানীর গির্জা। খ্রীস্টানদের এ উপসানালয়টি সর্বপ্রথম নির্মিত হয় ১৭৭৭ সালে। পরে ১৮৮৮ ও ২০০২ সালে দু বার এর সংস্কার করা হয়। গির্জার পাশেই রয়েছে খ্রীস্টনদের একটি কবরস্থান, সেন্ট ইউফ্রেটিজ কনভেন্ট নামে সিস্টারদের একটি থাকার জায়গা। একজন ফাদার ও একজন ডিকন দ্বারা পরিচালিত হয় এ গির্জার কার্যক্রম। বড়দিন, ইস্টার সানডে’তে এখানে বড় উৎসবের আয়োজন থাকে।
কিভাবে যাবেন
নিজস্ব পরিবহন নিয়ে যেতে পারলে নবাবগঞ্জের জায়গাগুলো বেড়ানো সহজ হবে। আর সে ব্যবস্থা না থাকলে যেতে পারেন বাসে করে। ঢাকার গুলিস্তান ও নয়াবাজার থেকে যমুনা, শিশির ও নবাবগঞ্জ পরিবহনের বাস চলাচল করে এই রুটে। ভাড়া জনপ্রতি ৫০ টাকা। নবাবগঞ্জ নেমে রিকশা নিয়ে ঘুরতে পারবেন জায়গাগুলো।
আলোকচিত্র ও লেখা মুস্তাফিজ মামুন
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মার্চ ২৩, ২০১০

সমুদ্রে ভোজনবিলাস

vromon
জাহাজ থেকে দেখা স্পিডবোট কক্সবাজারের সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত তো অনেক দেখা হয়েছে। কখনো কি গভীর সমুদ্রের মাঝ থেকে দেখা হয়েছে এসব দৃশ্য? এখন এ সুযোগ করে দিয়েছে ‘কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন’ নামের এক প্রমোদতরী। কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য এটি নতুন সংযোজন। ১৩ ফেব্রুয়ারি এই কেয়ারি ক্রুজের উদ্বোধন করা হয়। প্রতিদিন সকাল ১০টায় শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনা অর্থাৎ নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএর জেটিঘাট থেকে জাহাজটি সাগরের উদ্দেশে ছুটে চলে। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে সাগরে একাধিকবার প্রমোদ ভ্রমণ।
সকালে বাঁকখালী নদী থেকে যখন জাহাজটি সাগর পানে বেরিয়ে যায়, তখন দুই পাশের সবুজ প্যারাবনের সৌন্দর্য পর্যটকদের বিমোহিত করে। জাহাজের ছাদে দাঁড়িয়ে কিংবা কেবিনের ভেতর চেয়ারে বসে প্যারাবনের ভেতর নানা প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ কানে বাজে। কাচঢাকা বড় জানালা দিয়ে দেখবেন সাগর থেকে মাছ ধরে ফিরে আসা ট্রলার কিংবা যাত্রীবোঝাই করে মহেশখালীতে যাওয়া লঞ্চ ও স্পিডবোটের ছুটে চলার প্রতিযোগিতা।
বাঁকখালী নদী পেরিয়ে জাহাজটি মহেশখালী সাগর চ্যানেলে এলে অন্য রকম রোমাঞ্চ অনুভূত হয়। ঢেউ কেটে ছুটে চলা জাহাজটা দুলবে অল্প অল্প। তবে এতে ভয়ের কিছু নেই। কারণ, জাহাজটি উত্তাল সাগরে চলার উপযোগী করে বানানো।
মহেশখালী চ্যানেল পেরিয়ে পশ্চিম দিকে একটু এগোলে সামনে পড়ে সোনাদিয়া চ্যানেল। জাহাজের বাইরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সোনাদিয়া, মহেশখালী দ্বীপে বসবাসরত মানুষের জীবনসংগ্রাম, পার্শ্ববর্তী উপকূলে প্যারাবনের সৌন্দর্য দেখার মতো।
সোনাদিয়ার ভেতর দিয়ে পূর্ব থেকে উত্তর দিকে চলে গেছে বহদ্দারকাটা নদী বা খাল। ট্রলারমালিককে স্থানীয় ভাষায় বহদ্দার বলে। কোনো একসময় এই নদীতে জলদস্যুরা এক বহদ্দারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে হত্যা করেছিল। সেই থেকে নদীর নাম বহদ্দারকাটা নদী। এই নদীর উত্তর পাশে স্থাপিত হচ্ছে দেশের সর্ববৃহত্ গভীর সমুদ্রবন্দর। সোনাদিয়ার পশ্চিমে সাগরে নজরে পড়ে শত শত মাছ ধরার নৌকা। জালে আটকে পড়া মাছ ধরে বিক্রির জন্য জেলেরা ছুটছেন উপকূলের দিকে। মহেশখালী গোরকঘাটা বাজারে এই তরতাজা মাছের হাট বসে।
সোনাদিয়ার দক্ষিণ পাশে কক্সবাজার উপকূলের ফদনার ডেইল চর। এই চরেও শত শত ট্রলারের সরগরম উপস্থিতি। কেউ সাগর থেকে ধরে আনা মাছ এই চরে বিক্রি করছে, কেউ আবার ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে সাগরের দিকে ছুটছে। আকাশে দেখবেন গাঙচিল, পানকৌড়ি, সারসসহ নানা পাখির মেলা। সাগরে জাহাজের পাশঘেঁষে আসা-যাওয়া করে অসংখ্য ট্রলার। কপাল ভালো থাকলে দেখা মিলবে ডলফিনের। জাহাজের আগে যেন পথ দেখিয়ে ছুটে চলে এরা। কালো প্রজাতির এই ডলফিনকে স্থানীয় ভাষায় শুশুক বলে।
জাহাজ নিয়ে আরও একটু এগোলে সামনে পড়ে লাবণী পয়েন্ট। কক্সবাজার সৈকতের মূল পয়েন্ট যাকে বলে। এত দিন এই সৈকতে দাঁড়িয়ে সাগর দেখেছেন যাঁরা, এখন সাগর থেকে দাঁড়িয়ে তাঁরা লাবণী পয়েন্টে গোসল করতে নামা কিংবা কূলে দাঁড়িয়ে দৌড়ঝাঁপরত পর্যটক, তাঁদের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু পাহাড়, রাডার স্টেশন, লাইট হাউস, দরিয়ানগর দেখতে পাবেন।
শহরের বাঁকখালী নদী থেকে সোনাদিয়া, লাবণী পয়েন্ট, হিমছড়ি হয়ে ইনানী সৈকত পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটারের সাগর পাড়ি দিতে জাহাজটির সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। আবার ফিরে আসতেও লাগে দেড় ঘণ্টা। আসা-যাওয়ার এই মোট তিন ঘণ্টার সমুদ্রদর্শনে মাথাপিছু লাগে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা। সঙ্গে খাবার, চা-কফি, নাশতা সরবরাহ করা হয়। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে কম টাকায় ভ্রমণের ব্যবস্থা রয়েছে। বেসরকারি ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠান ‘কেয়ারি ট্যুরস অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড’ কক্সবাজারে প্রথমবারের মতো পর্যটকদের সমুদ্র বিনোদনের জন্য প্রমোদতরীটি পরিচালনা করছে।
কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইনের পরিচালক এস এম আবু নোমান জানান, ৩১০ জন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক এ প্রমোদতরীটি এখন দিনে দুবার আসা-যাওয়া করছে। ভবিষ্যতে দৈনিক চারবার (সকাল, দুপুর, বিকেল ও রাত) জাহাজটি সাগরে চলাচল করবে।
আব্দুল কুদ্দুস, কক্সবাজার
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৩, ২০১০

সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ অভিযান

honey-collection
সুন্দরবন এক ভিন্ন জগৎ। এর একেকটি রেঞ্জ ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্বলিত। সুন্দরবনের পশ্চিমাঞ্চলের একটি রেঞ্জ হলো বুড়িগোয়ালিনী। তিনমাস ধরে এ রেঞ্জে চলে মধু সংগ্রহ। আর এ পেশায় যারা নিয়োজিত তাদেরকে বলা হয় মৌয়াল। প্রতি বছর মধু সংগ্রহের এ অভিযান শুরু হয় পয়লা এপ্রিল থেকে। চাইলে আপনিও পারেন কোনো এক মৌয়াল দলের সঙ্গে অভিযাত্রী হয়ে উত্তেজনাকর একটি অভিজ্ঞতা গড়তে।
প্রতিবছর বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে মৌয়ালরা সুন্দরবনে যান মধু সংগ্রহ করতে। মধু সংগ্রহের এ যাত্রা শুরু হয় কিছু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে। যাত্রার শুরুতে একটি প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। প্রার্থনা শেষে প্রত্যেক মৌয়ালের হাতে বেঁধে দেয়া হয় লাল কাপড়। তাদের বিশ্বাস এ কাপড় বিপদ আপদ বিশেষ করে বাঘের হাত থেকে রক্ষা করবে তাদের। এরপরে মৌয়ালরা তাদের নৌকা নিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে অপেক্ষা করেন। বন কর্মকর্তা আকাশে গুলি ছুড়লেই সবাই বৈঠায় হাত লাগান। ছুটে চলেন বনের উদ্দেশ্যে।
গ্রীষ্মের শুরু থেকে মৌমাছিরা বিভিন্ন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ শুরু করে এবং বাইন, পশুর, গেওয়া, কাঁকড়া ও সুন্দরীসহ অন্যান্য গাছে মৌচাক তৈরি করে। বনে পৌঁছে এসব মৌচাকই খুঁজে বেড়ান মৌয়ালরা। মধু সংগ্রহের দলে সাধারণত সাত থেকে তেরজন মৌয়াল থাকেন। যাদের একজন নেতা থাকে। নেতাকে মৌয়ালরা বহড়দাড় বলে। বহড়দাড় মধু সংগ্রহের স্থান নির্ধারণ করেন। নৌকায় একজনকে রেখে বাকি মৌয়ালদেরকে নিয়ে দা, ধামা হাতে করে মধু সংগ্রহের জন্য জঙ্গলে প্রবেশ করে। আর এভাবেই মধু সংগ্রহের যাত্রা শুরু হয়।
বয়সে প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ মৌয়ালরা বাতাসের গতি ও মৌমাছির উপস্থিতি ইত্যাদি লক্ষ্য করে মৌচাকের অবস্থান খুঁজে বের করেন। যদি চার মিটার উচ্চতায় মৌমাছি উড়তে বা গাছের পাতায় মৌমাছির মল দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে আশেপাশেই মৌচাক রয়েছে।
আপনিও খুব কাছ থেকেই দেখতে পারেন মধু সংগ্রহের রোমাঞ্চকর সব দৃশ্য। আর এজন্য আপনাকে সাহায্য নিতে হবে কোনো অভিজ্ঞ ভ্রমণ সংস্থার। এ প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যটকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় মৌয়ালদের সঙ্গে মধু সংগ্রহের আয়োজন করে থাকে। যারা পর্যটকদের প্রতিটি পদক্ষেপ সঙ্গে নিয়ে মধু সংগ্রহের কৌশল দেখাবে। সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে মৌয়ালদের মধু সংগ্রহ দেখতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন অভিজ্ঞ কোনো ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে। প্রতি বছরের মতো এবারও বেঙ্গল ট্যুরস মধু সংগ্রহের বিশেষ প্যাকেজের ব্যবস্থা করেছে। যে কেউ সেই প্যাকেজ ভ্রমণে গিয়ে দেখে আসতে পারেন সুন্দরবনের মৌয়ালদের জীবনযাপন ও মধু সংগ্রহের রোমাঞ্চকর সব দৃশ্য। ৩১ মার্চ থেকে শুরু হবে এ প্যাকেজ। ৫ রাত ৪ দিনের এ প্যাকেজে জনপ্রতি খরচ হবে ৯৫০০ টাকা, বিদেশিদের জন্যে ১১৫০০ টাকা। ঢাকা থেকে তাপনিয়ন্ত্রিত বাসে করে সাতক্ষীরা। সেখান থেকে বেঙ্গলের নিজস্ব ভ্রমণ তরীতে চেপে পশ্চিম সুন্দরবনের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ানো আর মধু সংগ্রহ দেখা। যোগাযোগ: বাড়ি-৪৫, রোড-২৭, ব্লক-এ, বনানি, ঢাকা। ফোন: ৮৮৫৭৪২৪, ০১৭১৩০৩১৭৫৪, ০১৭১৫০১০৬০১।
আলোকচিত্র রফিকুল ইসলাম নাসিম
মুস্তাফিজ মামুন
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মার্চ ০৯, ২০১০