সুন্দরবন এক ভিন্ন জগৎ। এর একেকটি রেঞ্জ ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্বলিত। সুন্দরবনের পশ্চিমাঞ্চলের একটি রেঞ্জ হলো বুড়িগোয়ালিনী। তিনমাস ধরে এ রেঞ্জে চলে মধু সংগ্রহ। আর এ পেশায় যারা নিয়োজিত তাদেরকে বলা হয় মৌয়াল। প্রতি বছর মধু সংগ্রহের এ অভিযান শুরু হয় পয়লা এপ্রিল থেকে। চাইলে আপনিও পারেন কোনো এক মৌয়াল দলের সঙ্গে অভিযাত্রী হয়ে উত্তেজনাকর একটি অভিজ্ঞতা গড়তে।
প্রতিবছর বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে মৌয়ালরা সুন্দরবনে যান মধু সংগ্রহ করতে। মধু সংগ্রহের এ যাত্রা শুরু হয় কিছু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে। যাত্রার শুরুতে একটি প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। প্রার্থনা শেষে প্রত্যেক মৌয়ালের হাতে বেঁধে দেয়া হয় লাল কাপড়। তাদের বিশ্বাস এ কাপড় বিপদ আপদ বিশেষ করে বাঘের হাত থেকে রক্ষা করবে তাদের। এরপরে মৌয়ালরা তাদের নৌকা নিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে অপেক্ষা করেন। বন কর্মকর্তা আকাশে গুলি ছুড়লেই সবাই বৈঠায় হাত লাগান। ছুটে চলেন বনের উদ্দেশ্যে।
গ্রীষ্মের শুরু থেকে মৌমাছিরা বিভিন্ন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ শুরু করে এবং বাইন, পশুর, গেওয়া, কাঁকড়া ও সুন্দরীসহ অন্যান্য গাছে মৌচাক তৈরি করে। বনে পৌঁছে এসব মৌচাকই খুঁজে বেড়ান মৌয়ালরা। মধু সংগ্রহের দলে সাধারণত সাত থেকে তেরজন মৌয়াল থাকেন। যাদের একজন নেতা থাকে। নেতাকে মৌয়ালরা বহড়দাড় বলে। বহড়দাড় মধু সংগ্রহের স্থান নির্ধারণ করেন। নৌকায় একজনকে রেখে বাকি মৌয়ালদেরকে নিয়ে দা, ধামা হাতে করে মধু সংগ্রহের জন্য জঙ্গলে প্রবেশ করে। আর এভাবেই মধু সংগ্রহের যাত্রা শুরু হয়।
বয়সে প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ মৌয়ালরা বাতাসের গতি ও মৌমাছির উপস্থিতি ইত্যাদি লক্ষ্য করে মৌচাকের অবস্থান খুঁজে বের করেন। যদি চার মিটার উচ্চতায় মৌমাছি উড়তে বা গাছের পাতায় মৌমাছির মল দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে আশেপাশেই মৌচাক রয়েছে।
আপনিও খুব কাছ থেকেই দেখতে পারেন মধু সংগ্রহের রোমাঞ্চকর সব দৃশ্য। আর এজন্য আপনাকে সাহায্য নিতে হবে কোনো অভিজ্ঞ ভ্রমণ সংস্থার। এ প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যটকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় মৌয়ালদের সঙ্গে মধু সংগ্রহের আয়োজন করে থাকে। যারা পর্যটকদের প্রতিটি পদক্ষেপ সঙ্গে নিয়ে মধু সংগ্রহের কৌশল দেখাবে। সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে মৌয়ালদের মধু সংগ্রহ দেখতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন অভিজ্ঞ কোনো ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে। প্রতি বছরের মতো এবারও বেঙ্গল ট্যুরস মধু সংগ্রহের বিশেষ প্যাকেজের ব্যবস্থা করেছে। যে কেউ সেই প্যাকেজ ভ্রমণে গিয়ে দেখে আসতে পারেন সুন্দরবনের মৌয়ালদের জীবনযাপন ও মধু সংগ্রহের রোমাঞ্চকর সব দৃশ্য। ৩১ মার্চ থেকে শুরু হবে এ প্যাকেজ। ৫ রাত ৪ দিনের এ প্যাকেজে জনপ্রতি খরচ হবে ৯৫০০ টাকা, বিদেশিদের জন্যে ১১৫০০ টাকা। ঢাকা থেকে তাপনিয়ন্ত্রিত বাসে করে সাতক্ষীরা। সেখান থেকে বেঙ্গলের নিজস্ব ভ্রমণ তরীতে চেপে পশ্চিম সুন্দরবনের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ানো আর মধু সংগ্রহ দেখা। যোগাযোগ: বাড়ি-৪৫, রোড-২৭, ব্লক-এ, বনানি, ঢাকা। ফোন: ৮৮৫৭৪২৪, ০১৭১৩০৩১৭৫৪, ০১৭১৫০১০৬০১।
আলোকচিত্র রফিকুল ইসলাম নাসিম
মুস্তাফিজ মামুন
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মার্চ ০৯, ২০১০
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মার্চ ০৯, ২০১০
No comments:
Post a Comment