কালিম পাখি ‘ঠক-ঠক-ঠক, ঠকাঠক…’ সাতসকালে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। চোখ কচলে ঘড়ি দেখি, এত সকালে কড়া নাড়ে কে? দরজা খুলে দেখি ষাটোর্ধ্ব এক লোক দাঁড়িয়ে। নাম গফুর মিয়া। তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক। তাঁর বাহন আমাদের পৌঁছে দেবে হাইল হাওরের বাইক্কা বিলে। এই বিল দেখতেই রাতে পৌঁছেছি শ্রীমঙ্গল শহরে।
অনেক দিন থেকেই ভাবছিলাম বাইক্কা বিলে যাব। পাখি দেখব, ছবি তুলব। শেষে ইচ্ছে ও সময়ের সম্মিলন ঘটে এবারের ফেব্রুয়ারির শুরুতে।
আমরা তিন বন্ধু ঢাকা থেকে রওনা হই। রাত চারটায় শ্রীমঙ্গলের চৌমাথায় নামি। শীত প্রায় শেষ, তবু এখানে ঠান্ডা ভাব টের পেলাম। ঘুম ঘুম চোখে পথে নামলাম। হেঁটে হেঁটে হোটেল প্লাজায় উঠি। আমাদের বাহন পিচঢালা পথ ধরে এগিয়ে চলেছে। ঘুমে ঢুলুঢুলু দুই চোখ। একসময় অটোরিকশার ঝাঁকুনিতে সজাগ হলাম। একসময় পিচের পথ ছেড়ে মেঠো পথ ধরে চলা শুরু করলাম। বাইরে তাকাতেই চোখ থেকে ঘুম পালাল। রাস্তার দুপাশেই অসাধারণ ল্যান্ডস্কেপ! কৃষক ক্ষেতে বীজ রোপণে ব্যস্ত। রাখাল ছেলে গরুর পাল নিয়ে মাঠে চলেছে। গরুর পাল একটু পরপরই আমাদের পথ আগলে দাঁড়াচ্ছিল। ক্যামেরা হাতে নেমে পড়ছিলাম বারবার। জেলেদের ছোট ছোট দল কাঁধে মাছ ধরার জাল, পিঠ কিংবা মাথায় মাছের ঝুড়ি, আবার কেউ কেউ বইঠা হাতে চলেছে। একদল কিশোর-কিশোরী সেই সক্কালে গোল্লাছুট খেলায় মত্ত। এসব দেখতে দেখতে একসময় থেমে যায় আমাদের বাহন। হিজল ও করচ বনের ভেতর দিয়ে আমরা হাঁটতে থাকি। পুরো এলাকায় ঢোলকলমির সমারোহ। বছরের এই সময়ে কেমন যেন রুক্ষ চারপাশ। ঘাসগুলো মরে লালচে হয়ে আছে। প্রকৃতি যেন বৃষ্টির অপেক্ষায়।
এবার বাইক্কা বিলে পৌঁছে গেছি। শত-সহস্র পাখির সমাহার। বিলের মাঠ একদিকে সাদা, আরেক দিকে নীল। সাদায় ভরিয়ে দিয়েছে বক, আর নীল করেছে কালিম পাখি। পাখিগুলোর উড়াল দেখতে দেখতে চলে যাই পর্যবেক্ষণ (ওয়াচ) টাওয়ারের কাছে। টাওয়ারের সিঁড়িতে পা রাখতেই আমাদের স্বাগত জানান আদর মিয়া। তিনি টাওয়ারের প্রধান। বাইক্কা বিল মাছের অভয়াশ্রম। সঙ্গে সঙ্গে পাখির চারণক্ষেত্র হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত।
দুই চোখ ভাসিয়ে দিলাম বাইক্কা বিলের বিশাল জলাশয়ে। বহু দূর বিস্তৃত বিলে কেবল পাখি আর পাখি। পদ্মপাতায় ঢাকা বিল। বাইক্কা বিলকে এ জন্য স্থানীয় মানুষ পদ্ম বিলও বলে থাকে। বর্ষায় লাল পদ্মশোভিত বাইক্কা আরও সুন্দর। আদর মিয়া বললেন, ‘শীতে বাইক্কা বিলে মানুষ খুব বেশি আসে। কিন্তু ভাইজান, বর্ষাকালে বাইক্কা বিলে বেড়ানোর মজাই আলাদা।’ আমরা তখন পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের সর্বোচ্চ উচ্চতায় দাঁড়িয়ে। হাতের ক্যামেরায় দ্রুত ক্লিক করছি। একসময় নৌকা চলে এল। তাতে চড়ে বসতেই পদ্মপাতায় মোড়া জলাশয় ভেদ করে এগিয়ে চলল তরতর করে। আমাদের ডানে-বাঁয়ে, সামনে-পেছনে, ওপরে-নিচে পাখি আর পাখি। মাঝি মতিন মিয়া বলে চলেছেন, ‘ওই যে নিউ পিপি, দল পিপি, ধুপনি বক, ভূতিহাঁস, ইগল, ঠেঙ্গি, আর রাজ সরালি।’
আমাদের উচ্ছ্বাস দেখে নৌকার মাঝি মতিন মিয়ার আক্ষেপ, ‘খুব ভোরের দিকে আর সূর্যাস্তের সময় পাখি দেখার সেরা সময়।’ মতিন মিয়া আমাদের পানির দিকে তাকাতে বললেন। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। ডুবসাঁতারে মাছ ছুটে চলেছে। মাছেদের ধাক্কায় আমাদের নৌকা দুলে উঠছে।
অনেক দিন থেকেই ভাবছিলাম বাইক্কা বিলে যাব। পাখি দেখব, ছবি তুলব। শেষে ইচ্ছে ও সময়ের সম্মিলন ঘটে এবারের ফেব্রুয়ারির শুরুতে।
আমরা তিন বন্ধু ঢাকা থেকে রওনা হই। রাত চারটায় শ্রীমঙ্গলের চৌমাথায় নামি। শীত প্রায় শেষ, তবু এখানে ঠান্ডা ভাব টের পেলাম। ঘুম ঘুম চোখে পথে নামলাম। হেঁটে হেঁটে হোটেল প্লাজায় উঠি। আমাদের বাহন পিচঢালা পথ ধরে এগিয়ে চলেছে। ঘুমে ঢুলুঢুলু দুই চোখ। একসময় অটোরিকশার ঝাঁকুনিতে সজাগ হলাম। একসময় পিচের পথ ছেড়ে মেঠো পথ ধরে চলা শুরু করলাম। বাইরে তাকাতেই চোখ থেকে ঘুম পালাল। রাস্তার দুপাশেই অসাধারণ ল্যান্ডস্কেপ! কৃষক ক্ষেতে বীজ রোপণে ব্যস্ত। রাখাল ছেলে গরুর পাল নিয়ে মাঠে চলেছে। গরুর পাল একটু পরপরই আমাদের পথ আগলে দাঁড়াচ্ছিল। ক্যামেরা হাতে নেমে পড়ছিলাম বারবার। জেলেদের ছোট ছোট দল কাঁধে মাছ ধরার জাল, পিঠ কিংবা মাথায় মাছের ঝুড়ি, আবার কেউ কেউ বইঠা হাতে চলেছে। একদল কিশোর-কিশোরী সেই সক্কালে গোল্লাছুট খেলায় মত্ত। এসব দেখতে দেখতে একসময় থেমে যায় আমাদের বাহন। হিজল ও করচ বনের ভেতর দিয়ে আমরা হাঁটতে থাকি। পুরো এলাকায় ঢোলকলমির সমারোহ। বছরের এই সময়ে কেমন যেন রুক্ষ চারপাশ। ঘাসগুলো মরে লালচে হয়ে আছে। প্রকৃতি যেন বৃষ্টির অপেক্ষায়।
এবার বাইক্কা বিলে পৌঁছে গেছি। শত-সহস্র পাখির সমাহার। বিলের মাঠ একদিকে সাদা, আরেক দিকে নীল। সাদায় ভরিয়ে দিয়েছে বক, আর নীল করেছে কালিম পাখি। পাখিগুলোর উড়াল দেখতে দেখতে চলে যাই পর্যবেক্ষণ (ওয়াচ) টাওয়ারের কাছে। টাওয়ারের সিঁড়িতে পা রাখতেই আমাদের স্বাগত জানান আদর মিয়া। তিনি টাওয়ারের প্রধান। বাইক্কা বিল মাছের অভয়াশ্রম। সঙ্গে সঙ্গে পাখির চারণক্ষেত্র হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত।
দুই চোখ ভাসিয়ে দিলাম বাইক্কা বিলের বিশাল জলাশয়ে। বহু দূর বিস্তৃত বিলে কেবল পাখি আর পাখি। পদ্মপাতায় ঢাকা বিল। বাইক্কা বিলকে এ জন্য স্থানীয় মানুষ পদ্ম বিলও বলে থাকে। বর্ষায় লাল পদ্মশোভিত বাইক্কা আরও সুন্দর। আদর মিয়া বললেন, ‘শীতে বাইক্কা বিলে মানুষ খুব বেশি আসে। কিন্তু ভাইজান, বর্ষাকালে বাইক্কা বিলে বেড়ানোর মজাই আলাদা।’ আমরা তখন পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের সর্বোচ্চ উচ্চতায় দাঁড়িয়ে। হাতের ক্যামেরায় দ্রুত ক্লিক করছি। একসময় নৌকা চলে এল। তাতে চড়ে বসতেই পদ্মপাতায় মোড়া জলাশয় ভেদ করে এগিয়ে চলল তরতর করে। আমাদের ডানে-বাঁয়ে, সামনে-পেছনে, ওপরে-নিচে পাখি আর পাখি। মাঝি মতিন মিয়া বলে চলেছেন, ‘ওই যে নিউ পিপি, দল পিপি, ধুপনি বক, ভূতিহাঁস, ইগল, ঠেঙ্গি, আর রাজ সরালি।’
আমাদের উচ্ছ্বাস দেখে নৌকার মাঝি মতিন মিয়ার আক্ষেপ, ‘খুব ভোরের দিকে আর সূর্যাস্তের সময় পাখি দেখার সেরা সময়।’ মতিন মিয়া আমাদের পানির দিকে তাকাতে বললেন। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। ডুবসাঁতারে মাছ ছুটে চলেছে। মাছেদের ধাক্কায় আমাদের নৌকা দুলে উঠছে।
যাতায়াত, থাকা-খাওয়া
ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে যেতে হয় শ্রীমঙ্গল। সেখানে আবাসিক হোটেলে ওঠা যায়। আবার শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে কমলগঞ্জ সড়কে লাউয়াছড়া বনের কাছে রয়েছে চা বাগানের টি-রিসোর্ট। তবে এখানে থাকলে আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে।
ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে যেতে হয় শ্রীমঙ্গল। সেখানে আবাসিক হোটেলে ওঠা যায়। আবার শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে কমলগঞ্জ সড়কে লাউয়াছড়া বনের কাছে রয়েছে চা বাগানের টি-রিসোর্ট। তবে এখানে থাকলে আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে।
ফারুখ আহমেদ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ০২, ২০১০
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ০২, ২০১০
No comments:
Post a Comment