Pages

Sunday, August 5, 2012

ইছামতির তীরে

ichhamati
ঢাকার কাছেই ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন স্থাপনা সমৃদ্ধ একটি জায়গা নবাবগঞ্জ। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এ জায়গাটিতে খুব অল্প সময়েই পৌঁছানো যায় ঢাকা থেকে। নবাবগঞ্জের মূল আকর্ষণ হলো এ এলাকার প্রাচীন কিছু জমিদার বাড়ি। চলুন তাহলে ঘুরে আসি নবাবগঞ্জ থেকে।
ইছামতি নদী
নবাবগঞ্জ শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে ইছামতি নদী। শহরের মহাকবি কায়কোবাদ মোড় থেকে পশ্চিম দিকে কলাকোপার। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শান্ত, স্নিগ্ধ এক নদী। নাম তার ইছামতি। ছোট বেলায় ইছামতির যে রূপের বর্ণনা পড়েছিলাম এখনও যেন তার কোনো কমতি নেই বর্তমানের ইছামতির মধ্যে।
গান্ধী মাঠ
নবাবগঞ্জের কলাকোপায় রয়েছে ঐতিহাসিক গান্ধী মাঠ। সর্বভারতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গান্ধীজি ১৯৪০ সালে এই মাঠে এসেছিলেন। তারপর থেকে এই মাঠের নাম গান্ধী মাঠ।
আর এন হাউস
গান্ধী মাঠ ফেলে কিছু দূর সামনে এগুলেই রয়েছে প্রাচীন একটি বাড়ি। এরই নাম আর এন হাউস। ইট থেকে চুন সুরকি খসে ধ্বংসের প্রহর গুনলেও এখনো সগর্বে বাড়িটি তার জৌলুস জানান দিচ্ছে। এ বাড়ির বাসিন্দা ৮৫ বছরের হরেন্দ্র কুমার সাহা জানালেন এ বাড়ির নাম আর এন হাউস। তার দাদার বাবা রাধানাথ সাহা মুর্শিদাবাদ থেকে এসে প্রায় আড়াইশ বছর আগে এ বাড়ি তৈরি করেছিলেন। চারদিকে কক্ষ ঘেরা এ বাড়ির সামনের অংশে ছিল অতিথিশালা, পেছনে অন্দর মহল এবং পাশেই মন্দির। মাঝে ছোট একটি খোলা জায়গা। বাড়ির সম্মুখভাগ বিশাল তোরণ আকৃতিতে তৈরি। আর এন হাউসের সামনে একেবারে ইছামতির তীর ঘেঁষে রয়েছে সুন্দর দোতলা একটি বাড়ি। হরেন্দ্র বাবুর বাবার ছিল লবনের ব্যবসা। লিভারপুল থেকে লবন আমদানি করতেন তিনি। সে ব্যবসার গদিঘর ছিল এ বাড়িটি।
জগবন্ধু সাহা হাউস
আর এন হাউস থেকে প্রায় এক কিলোমিটার সামনে রয়েছে আরেকটি প্রাচীন ভবন জগবন্ধু সাহা হাউস। এ বাড়ির বাসিন্দা কমলারানী জানালেন তার দাদা শ্বশুর জগবন্ধুসাহা তৈরি করেছিলেন এ বাড়ি। বিশাল আকৃতির দ্বিতল এ বাড়িটির নির্মাণশৈলী খুবই আকর্ষণীয়।
খেলারাম দাতার বাড়ি
কলাকোপা থেকে ছোট্ট একটি সড়ক চলে গেছে বান্দুরার দিকে। বান্দুরায় রয়েছে গাছগাছালিতে ঢাকা ধ্বংসপ্রায় খেলারাম দাতার বাড়ি। খেলারাম দাতাকে নিয়ে এ অঞ্চলে অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে। এরকম একটি হলো খেলারাম দাতা ছিলেন বিখ্যাত ডাকাত সর্দার। তবে তার দানের হাত ছিল বেশ বড়। সে ডাকাতি করে গরিব দুঃখীদের সাহায্য করত। তারই বাড়ি ছিল এটি। এ বাড়ি থেকে একটি সুড়ঙ্গ পথ ছিল ইছামতির পাড়ে। নদীপথে ধনসম্পদ এনে এ সুড়ঙ্গ পথেই বাড়িতে নিয়ে আসত খেলারাম দাতা। দোতলা এ বাড়ির নিচতলায় এখনো সুড়ঙ্গ পথটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। নিচতলায় অনেকগুলো কক্ষ থাকলেও এখন তার প্রায় সবই আবর্জনা আর মাটিতে ঢেকে আছে। আর দোতলায় চার পাশে ও চার কোনে চারটি করে বাংলা ঘরের আকৃতিতে এক কক্ষ বিশিষ্ট আটটি ঘর। মাঝে রয়েছে মঠ আকৃতির আরেকটি ঘর। লোকমুখে শোনা যায় এঘরে অনেক মূল্যবান মূর্তি ও ধনসম্পদ ছিল।
ব্রজ নিকেতন
বান্দুরা- দোহার সড়কের পাশেই রয়েছে প্রাচীন একটি বাড়ি দুটি সুন্দর ব্রজ নিকেতন। বাড়িটির চোখ ধাঁধানো নির্মাণশৈলী দেখে যেকোনো পথিকের পা থমকে যাবে কিছুক্ষণের জন্য হলেও। সুন্দর এ বাড়িটি ঘুরে দেখতে পারেন।
জপমালা রানীর গির্জা
বান্দুরায় আরেকটি দর্শনীয় স্থান হলো জপমালা রানীর গির্জা। খ্রীস্টানদের এ উপসানালয়টি সর্বপ্রথম নির্মিত হয় ১৭৭৭ সালে। পরে ১৮৮৮ ও ২০০২ সালে দু বার এর সংস্কার করা হয়। গির্জার পাশেই রয়েছে খ্রীস্টনদের একটি কবরস্থান, সেন্ট ইউফ্রেটিজ কনভেন্ট নামে সিস্টারদের একটি থাকার জায়গা। একজন ফাদার ও একজন ডিকন দ্বারা পরিচালিত হয় এ গির্জার কার্যক্রম। বড়দিন, ইস্টার সানডে’তে এখানে বড় উৎসবের আয়োজন থাকে।
কিভাবে যাবেন
নিজস্ব পরিবহন নিয়ে যেতে পারলে নবাবগঞ্জের জায়গাগুলো বেড়ানো সহজ হবে। আর সে ব্যবস্থা না থাকলে যেতে পারেন বাসে করে। ঢাকার গুলিস্তান ও নয়াবাজার থেকে যমুনা, শিশির ও নবাবগঞ্জ পরিবহনের বাস চলাচল করে এই রুটে। ভাড়া জনপ্রতি ৫০ টাকা। নবাবগঞ্জ নেমে রিকশা নিয়ে ঘুরতে পারবেন জায়গাগুলো।
আলোকচিত্র ও লেখা মুস্তাফিজ মামুন
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মার্চ ২৩, ২০১০

No comments:

Post a Comment