ব্যস্ত জীবনে অবসর খুব একটা মেলে না। তাই একটু সময় পেলেই মন আর এই ইট-কাঠের শহরে থাকতে চায় না। কাজের চাপে যখন আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি, কোথাও একটু বেড়িয়ে এলে সব অবসাদ দূর হয়ে যায়। পাওয়া যায় নতুন করে কাজ করার শক্তিও। বেড়ানোর জন্য শীতকাল ভালো সময়। তাই বলে গরমের সময় বেড়ানো যাবে না এমন তো নয়। সময় যদি কিছুটা বেশি পাওয়া যায় তবে ঘুরে আসা যায় দূরে কোথাও। আজ বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে পর্যটন দিবস। তাই আমাদের আজকের আয়োজনের উদ্দেশ্য আপনাদের ভ্রমণের সহযাত্রী হয়ে ভ্রমণটিকে আরও সুন্দর করে তোলা। ভ্রমণের প্রাথমিক প্রস্তুতির কথা লিখেছেন প্রাঞ্জল সেলিম
চলছে শরত্কাল, বর্ষার বিদায়ের ঠিক পরপরই অপার এক সৌন্দর্যের হাতছানি দিয়ে আগমন ঘটে শরতের। চারিদিকে সবুজের সমারোহ আর কাশবনে ঝিরিঝিরি বাতাসের দোল। দেখতে দেখতে কখন যে মনও দোল খেতে শুরু করে বুঝা মুশকিল। তরুণ-বৃদ্ধ থেকে শুরু করে শিশু পর্যন্ত মুগ্ধ হয় সবাই। এমন মন মাতানো পরিবেশে কার না বেড়াতে ইচ্ছে করে! আর বেড়াতে যেতে হলে লক্ষ রাখতে হবে সব প্রস্তুতি ঠিকভাবে নেওয়া হয়েছে কি না। তাহলে চলুন, দেখা যাক, এ সময়ে বেড়ানোর প্রস্তুতি কেমন হওয়া চাই।
পোশাক বাছাই :তরুণ মনে শরত্ আসে অন্যভাবে। শরতের প্রকৃতি তরুণ মনে ভালোবাসার রং পালটাতে বিরাট ভূমিকা রাখে। প্রতিটি ঋতুই যেন হাজির হয় নিজ নিজ মহিমায়। রং, রূপ, বৈশিষ্ট্যে মৌলিকতার পরিচয় দেয়। এ কারণে রচিত হয়েছে ঋতুভিত্তিক অনেক কবিতা, গান, উপন্যাস। এ সময়ে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে শুভ্র-সাদা পোশাক পরার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। আর তাই ভ্রমণের একদম প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে পোশাক বাছাই ধরা যেতে পারে। পোশাকের ক্ষেত্রে হালকা রঙের সুতি কাপড় নেওয়া যেতে পারে। এ সময় দেশি সুতি কাপড় বেশ আরামদায়কও বটে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, পোশাকের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে আবার প্রয়োজনীয় জিনিস নিতে পারছেন না, এমনটা যেন না হয়। সাথে ছোট্ট শিশু থাকলে তার পোশাক একটু বেশি করেই নিতে হবে। আলাদা ব্যাগে শিশুর ন্যাপি, ডায়াপার, কাঁথা, ক্লথ ইত্যাদি নিন।
ট্রাভেল ব্যাগ :ভ্রমণের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হলো প্যাকিং-প্রসেস। এ ক্ষেত্রে সঠিক ব্যাগ নিবার্চন করতে পরিচয় দিতে হবে খানিকটা বুদ্ধিমত্তার। যেমন, কোথায় যাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পরিমাণ কেমন হতে পারে। আর এজন্য কী ধরনের ব্যাগ নিলে ভালো সেটাও বুঝতে হবে। অযথা বড় ব্যাগ নিয়ে গেলে পোহাতে হতে পারে বিভিন্ন ধরনের ঝক্কি-ঝামেলা। অনেক সময় বড় ব্যাগ বহন করাও একটা ঝামেলা হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং সব থেকে ভালো হলো সহজে বহন করা যায় এমন ধরনের ব্যাগ সাথে নেওয়া। তবে খেয়াল রাখতে হবে প্রয়োজনীয় জিনিস যেন বাদ না যায়। ব্যবসা সংক্রান্ত অথবা পারিবারিক ভ্রমণের জন্য ট্রাভেল ব্যাগ প্রয়োজনীয় এক সঙ্গী। আকার, রং, কাপড়, নকশা ও দামের ভিন্নতা থাকলেও এর উপযোগিতা কিন্তু একটিই—ভ্রমণকে সহজ ও নিশ্চিত করে তোলা। তাই স্টাইল, সুবিধা, ব্যক্তিত্ব ও বয়স অনুযায়ী সঠিক ব্যাগ বেছে নিতে হয়। ফ্যাশন সচেতন অনেকেই ব্যাগের রঙের ব্যাপারে একটু খুঁতখুঁতে। বেশি দিনের জন্য বেড়াতে গেলে সাধারণ ট্রাভেল ব্যাগের চেয়ে বড় ট্রলি ব্যাগই ভলো। এগুলোর লম্বা হাতল ধরে সহজেই চাকা দিয়ে গড়িয়ে নিয়ে চলা যায়। তাই এ ব্যাগগুলোর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আবার ফ্যাশনেবল বলে তরুণ প্রজন্মের কাছেও এগুলো বেশ প্রিয়। কাঁধে ঝোলানোর ব্যাগগুলোতে ল্যাপটপ বহন করতে পারেন সহজেই। এগুলো ট্রাভেল ব্যাগের মতো যেমন নেওয়া যায়, তেমনি মাঝেমধ্যে এগুলোতে লাগানো চাকা টেনে কিংবা হাতল ধরেও নেওয়া যায়। কিছু ব্যাগ আবার চেইনের সাহায্যে ছোট-বড় করা যায়। চাইলে কিনতে পারেন এ ধনের ব্যাগও। ট্রাভেল ব্যাগ কেনার ক্ষেত্রে দরকার একটু বাড়তি সচেতনতা। কেনার সময় দেখে নিন ব্যাগটি পানিরোধক কি না। পানিরোধক ব্যাগে কাপড় ও দরকারি জিনিস যত্নে থাকবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাগের কাপড়টি দেখে কিনতে হবে। কমফোর্ট বা প্যারাসুট কাপড়গুলো বেশ ভালো।
ইলেক্ট্রোনিক সামগ্রী :পারিবারিক হোক অথবা অফিসিয়াল ভ্রমণ হোক, কিছু জিনিস এমন থাকে সেগুলোর প্রয়োজনীয়তা সবার ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। ভ্রমণের অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে রয়েছে ইলেক্ট্রিনিক সামগ্রী। যেমন, সেল ফোন, ক্যামেরা, ইলেক্ট্রিক রেজার ইত্যাদি। এসব জিনিস ভ্রমনের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্ব বহনকরে। যেমন দূরে কোথও গেলে মোবাইলের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায় বহুগুনে। হতে পারে কোনো জরুরি দরকারে কথা বলতে হতে পারে অফিসে, অথবা বাসার কারও সাথে। এরপরই আসে ক্যামেরার প্রয়োজনীয়তা। মানুষ বেড়াতে যেতে পছন্দ করে তার ক্লান্তি দূর করতে, মনটাকে স্নিগ্ধতার পরশ বুলিয়ে দিতে। আর তাই তারা বেড়ানোর জন্য বেছে নেয় সুন্দর থেকে সুন্দরতর জায়গাগুলো। আর সবসময়ই তাদের মধ্যে কাজ করে এই সুন্দর মুহূর্তগুলো ধরে রাখার প্রবণতা। তাই ভ্রমণে ক্যামেরা সাথে নেওয়াটা হয়ে গেছে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর মধ্যে একটি। তবে শুধু ক্যামেরা বহন করলেই হবে না, এর জন্য প্রয়োজন সঠিক ব্যবস্থাপনা। যেমন, ক্যামেরার জন্য ভালো একটি ব্যাগের ব্যবস্থা করা, যাতে সেটা বহন করতে কোনো সমস্যা না থাকে। আবার খুব সহজে যেকোনো পরিবেশে নিয়ে বেড়ানো যায়। এই ব্যাগ ক্যামেরা এবং অন্যান্য সবকিছুকে শুধু সহজে বহনই করে না, বরং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ক্যামেরাকে রক্ষা করে। এমনকি হঠাত্ আসা বৃষ্টি থেকেও। মনে রাখবেন ভ্রমণের ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রোনিক এই জিনিসগুলোর প্রয়োজনীয়তা কম নয়!
টুকিটাকি :পোশাক, ব্যাগ, ইলেক্ট্রোনিক সামগ্রী নেওয়া শেষ! এবার যাবার পালা! না ভ্রমণের প্রস্তুতি কিছুটা বাকি রয়ে গেছে এখনো। টুকিটাকি কিছু জিনিস বাকি রয়ে গেছে যেগুলো ভ্রমণে অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করতে পারে। যেমন, টুথপেস্ট, ব্রাশ, ফেইস ওয়াশ, ক্রিম, লোশন, বডি স্প্রে ও হেয়ার ক্রিম, মাথা ব্যথার টেবলেট, এক জোড়া বাড়তি স্যান্ডেল, বাস অথবা ট্রেন জার্নিতে পড়ার জন্য গল্পের বই-ম্যাগাজিন। মোবাইলের জন্য কিছু বাড়তি সতর্কতামূলক এক্সট্রা ব্যাটারি, চার্জার প্রভৃতি।
সতর্কতা
মানিব্যাগ সাবধানে রাখবেন। সবটাকা মানিব্যাগে না রেখে কিছু টাকা অন্যকোনো জায়গায় রাখবেন। একটি কার্ডে আপনার ঠিকানা লিখে রাখবেন। ব্যাগ হারিয়ে গেলে কোনো সুহূদয়বান ব্যক্তি পেয়ে থাকলে ফেরত পাবার সম্ভাবনা থাকবে। ভ্রমণে দামি মোবাইল ব্যবহার না করাই উত্তম। কারণ ভ্রমণকালীন সময়ে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। যে জায়গায় যাচ্ছেন সেই জায়গা সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার। অথবা ওই এলাকায় পরিচিতি কেউ থাকলে তার সাহায্য নিন। সন্ধ্যার পর অথবা বেশি রাত পর্যন্ত হোটেলের বাইরে অবস্থান করবেন না। বিশেষ করে পরিবার নিয়ে ভ্রমণ করতে গেলে। শিশুদের দিকে লক্ষ্য রাখুন। কোনো অসুবিধা হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিন।
লেখক: প্রাঞ্জল সেলিম
No comments:
Post a Comment