Pages

Sunday, July 29, 2012

বেড়ানো : দুর্গ ভ্রমণ

Details
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে মুঘল আমলের বিভিন্ন স্থাপনা বিদ্যমান। আর সে আমলের স্থাপত্যিক নিদর্শনের ছাপ এখানো দেখা দিলে প্রাচীন দুর্গগুলোতে। ঢাকা ও এর আশপাশের কয়েকটি দুর্গ নিয়ে কড়চার এবারের বেড়ানো।  

লালবাগ দুর্গ
১৬৭৮ সালে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের ছেলে শাহজাদা আজম লালবাগ কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কাজ শুরু করার পর তিনি দিল্লি চলে গেলে নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত থেকে যায়। এর পরে শায়েস্তা খান এসে আবার দুর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। লালবাগ দুর্গের ভেতরে রয়েছে তিনটি মূল্যবান পুরাকীর্তি। পরী বিবির মাজার, দরবার হল ও তিন গম্বুজবিশিষ্ট একটি মসজিদ। চারদিকে উঁচু প্রাচীরবেষ্টিত। দুর্গে প্রবেশের জন্য ছিল চারটি ফটক। দক্ষিণ দিকেরটি ছিল মূল ফটক। মূল ফটকের সামান্য উত্তরে ছিল একটি গুপ্তপথ। বর্তমানে এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। ধারণা করা হয়, এ গুপ্তপথ দিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনাকান্দা দুর্গের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হতো। দক্ষিণ ফটক দিয়ে উত্তরের ফটকে যাওয়ার মাঝে রয়েছে চারকোণাকৃতির একটি পুকুর। জনশ্রুতি আছে, সিপাহী বিপ্লবে নিহত এ অঞ্চলের সৈন্যদের লাশ এখানে ফেলা হতো। পুকুরের পশ্চিম পাশেই রয়েছে দুর্গের দরবার হল। এর নিচ তলায় আছে একটি হাম্মাম খানা। অনেকে মনে করে শায়েস্তা খান এই ঘরে বাস করতেন। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। দরবার হল থেকে কিছুটা পশ্চিম দিকেই পরীবিবির মাজার। হিন্দু ও মুসলিম স্থাপত্যের সংমিশ্রণ রয়েছে এ স্থাপনাটিতে। মূল্যবান মার্বেল পাথর, কষ্টি পাথর, বিভিন্ন ফুল আর পাতার নকশা করা টালি দিয়ে মাজারের ৯টি ঘর সাজানো রয়েছে। ছাদ কষ্টি পাথরের তৈরি। ঐতিহাসিকদের মতে ১৬৮৮ সালের আগেই এ মাজার তৈরি করা হয়েছে। মাজারের চারদিকে মোট ১২টি দরজা আছে। ঐতিহাসিকগণের মতে পরীবিবি ছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেবের ছেলে শাহজাদা আজমের স্ত্রী। পরীবিবির মাজারের পশ্চিম পাশেই আছে দুর্গের মসজিদ। মসজিদের ছাদে তিনটি গম্বুজ ও চার কোণে চারটি মিনার আছে।  লালবাগ দুর্গের গ্রীষ্মকালীন (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) সময়সূচি হলো— সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। আর শীতকালীন (অক্টোবর থেকে মার্চ) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা। মাঝে ১টা থেকে ত্রিশ মিনিটের মধ্যাহ্ন বিরতি। শুক্রবারে মধ্যাহ্ন বিরতি থাকে ১২টা ৩০ মিনিট থেকে ২টা ৩০ মিটিন পর্যন্ত। রোববার পূর্ণ দিবস, সোমবার অর্ধ দিবস এবং সব সরকারি ছুটির দিনগুলোতে লালবাগ দুর্গ বন্ধ থাকে।

হাজীগঞ্জ দুর্গ
নারায়ণগঞ্জ জেলা শহরের কিল্লারপুলে অবস্থিত ঐতিহাসিক হাজীগঞ্জ দর্গ। বাংলার বার ভূঁইয়াদের অন্যতম ঈঁসা খাঁর কেল্লা হিসেবেও অনেকের কাছে এটি পরিচিত। এটি একটি জল দুর্গ। নদীপথে মগ ও পর্তুগিজদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য মীরজুমলার শাসনামলে নির্মিত বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন। চতুর্ভুজাকৃতির এই দুর্গের প্রাচীরে রয়েছে বন্দুক বসিয়ে গুলি চালাবার ফোকর। একটু ওপর থেকে দুর্গটি দেখতে অনেকটা ফুলের মতো।
ঢাকা থেকে বাসে এসে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া বাস স্টান্ডে নেমে সেখান থেকে রিকশায় আসা যাবে হাজীগঞ্জ। এ পথে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলাচল করে বিআরটিসি বন্ধন, উত্সব, সেতু, আনন্দ ইত্যাদি পরিবহনের বাস। ঢাকার বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট ও গুলিস্তান হকি স্টেডিয়ামের সামনে থেকে ছাড়ে বাসগুলো। ভাড়া ২৫-৩৫ টাকা।

সোনাকান্দা দুর্গ
শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দরে অবস্থিত এ জল দুর্গটি। হাজীগঞ্জ দুর্গের প্রায় বিপরীত দিকেই এর অবস্থান। নদীপথে ঢাকার সঙ্গে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ নদীপথগুলোর নিরাপত্তার জন্য মুঘল শাসকগণ কতগুলো জলদুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম সোনাকান্দা দুর্গ। এ দুর্গটি দেখতে অনেকটা হাজীগঞ্জ দুর্গের মতোই। তবে আকারে কিছুটা ছোট। জনশ্রুতি আছে এ দুর্গ থেকে পাতাল পথে হাজীগঞ্জ দুর্গের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।  নারায়ণগঞ্জ শহরের গুদারাঘাট থেকে নৌকায় নদী পার হয়ে রিকশা কিংবা বেবি টেক্সি করে সোনাকান্দা দুর্গে যাওয়া যাবে। ভাড়া যথাক্রমে ৩০-৬০ টাকা।   

ইদ্রাকপুর দুর্গ
মুন্সীগঞ্জ শহরের ইদ্রাকপুরে অবস্থিত ইদ্রাকপুর দুর্গ। ইতিহাস থেকে জানা যায়, মুঘল সুবাদার মীর জুমলা ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলা সদরে পুরোনো ইছামতি নদীর পশ্চিম তীরের ইদ্রাকপুরে এই দুর্গটি নির্মাণ করেন। নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ ও সোনাকান্দা দুর্গের চেয়ে এটি আয়তনে কিছুটা ছোট। সে সময়ে মগ ও পর্তুগীজ জল দস্যুদের আক্রমণ থেকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য এলাকা রক্ষা করার জন্য নির্মিত হয়েছিল এই দুর্গটি। সুড়ঙ্গ পথে ঢাকার লালবাগ দুর্গের সাথে এই দুর্গের সংযোগ ছিল বলে একটি জনশ্রুতি আছে। উঁচু প্রাচীর ঘেরা এই দুর্গের চারকোণে রয়েছে একটি করে গোলাকার বেস্টনী। দুর্গের ভেতর থেকে শত্রুর প্রতি গোলা নিক্ষেপ করার জন্য চারদিকের দেয়ালের গায়ে রয়েছে অসংখ্য ছিদ্র। বাংলাদেশে মুঘল স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন হিসেবে ইদ্রাকপুর দুর্গটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষিত হয় ১৯০৯ সালে।  ঢাকা থেকে সড়ক ও জলপথে মুন্সিগঞ্জ জেলা সদরে আসা যায়। ঢাকার গুলিস্তান ও বঙ্গভবনের দক্ষিণ পাশ থেকে নয়ন পরিবহন, ঢাকা ট্রান্সপোর্ট ছাড়াও বেশ কিছু বাস মুন্সিগঞ্জ যায়। ভাড়া ৪০-৫০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকার সদরঘাট থেকে ছোট ছোট কিছু লঞ্চ ছাড়াও চাঁদপুরগামী সব বড় বড় লঞ্চই মুন্সিগঞ্জ কাঠপট্টি স্টেশনে থামে। ভাড়া ১৫-২০ টাকা।

আলোকচিত্র ও লেখা মুস্তাফিজ মামুন
http://new.ittefaq.com.bd/news/view/56841/2012-07-29/15

No comments:

Post a Comment