পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেড়ানোর জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক সময় ঈদের ছুটি। এবারের ঈদের ছুটিটা ঠিক ভ্রমণ মৌসুমে না পড়লেও সময়টা প্রকৃতিকে উপভোগ করার জন্য সবচেয়ে উত্তম। তাই ভ্রমণপাগল মানুষেরা এ সময়ে ঘরে বসে থাকবেন না।
সুন্দরবন নাকি দিনেই কমপক্ষে চারবার তার রূপ বদলায়। তার এ রূপের বদল আরও বেশি লক্ষ করা যায় ঋতুভেদে। একেক ঋতুতে সুন্দরবনের রূপ রঙে নানান বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। তবে প্রকৃতি প্রেমিকরা বলেন সুন্দরবনের আসল সৌন্দর্য বর্ষাতেই। সুন্দরবন তার রূপের আসল পসরা খুলে বসে এ ঋতুতে। এ সময় বনের চারদিকে সবুজ ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। সুন্দরবনের এ সৌন্দর্য যারা দেখেননি ঈদের ছুটির সুযোগে তারা দেখে নিতে পারেন। এ ভ্রমণে বাড়তি পাওনা হবে নদীমাতৃক বাংলাদেশের দীর্ঘ পথের সৌন্দর্য উপভোগ।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারের ঈদের ছুটিতে বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থা বেঙ্গল ট্যুরস সুন্দরবনে তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা সাজিয়েছে। সংস্থার পরিচালক রফিকুল ইসলাম নাসিম জানালেন, এবারের সুন্দরবনে তাদের ঈদ ভ্রমণ চার রাত চার দিনের। ঈদের পরের দিন (২১ আগস্ট ) সকালে ঢাকা থেকে তাদের নিজস্ব ভ্রমণতরী এমভি ডিঙ্গিতে করে সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা। সারাদিন বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার নদীপথের সৌন্দর্য দেখা হবে এ ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ। পরদিন সকালে সুন্দরবনে পৌঁছানো হবে কটকা অভয়ারণ্যে। সন্ধ্যা নাগাদ সেখানকার জঙ্গলে হেঁটে বেড়ানো। রাতে লঞ্চে অবস্থান। পরের দিন খুব সকালে নৌকায় করে ছোট ছোট খালে নিয়ে যাওয়া হবে বন ও বন্যপ্রাণী দর্শনে। বিভিন্ন খাল ঘুরে আবারও লঞ্চে ফিরে আসা হবে সকালের খাবার খেতে। এরপরে আবারও জঙ্গলের ভেতর থেকে হেঁটে যাওয়া হবে কটকার জামতলা সমুদ্র সৈকতে। সেখানে ঘুরে দুপুর নাগাদ আবারও ফিরে আসা হবে লঞ্চে। দুপুরের খাবার খেতে খেতে লঞ্চ নোঙ্গর তুলবে সুন্দরবনের আরেক অভয়ারণ্য কচিখালির উদ্দেশ্যে। কচিখালি পৌঁছে ফরেস্ট অফিসের সামনে রাত যাপন। লঞ্চে রাতে বারবিকিউ ডিনার। পরের দিন খুব সকালে আবারও কচিখালির ছোট ছোট খালে নৌকায় চড়ে বন ভ্রমণ। সকালের নাস্তার শেষে আবারও জঙ্গলে হেঁটে বেড়ানোর পর লঞ্চ ছাড়বে খুলনার উদ্দেশ্যে। পুরো পথটি সুন্দরবনের ছোট ছোট নদী-খাল ধরে সন্ধ্যা নাগাদ ফিরে আসবে খুলনায়। তারপরে রাতের বাসে আবার সেই কর্মব্যস্ত ঢাকা শহরের পথে। ঈদের পরের দিন সকালবেলা ডেমরার শীতলক্ষ্যা থেকে যাত্রা শুরু করে মেঘনা, পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, কীর্তনখোলা, সুগন্ধা, গাবখান চ্যানেল, কচা, বলেশ্বর প্রভৃতি নদীর দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বেঙ্গলের ডিঙ্গি পৌঁছাবে সুন্দরবনে।
চার রাত চার দিনের এ ভ্রমণে জনপ্রতি লাগেব এগার হাজার টাকা, বিদেশিদের জন্য তের হাজার টাকা। দুই থেকে বারো বছরের শিশুদের জন্য ৩০ ভাগ ছাড়। প্যাকেজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ভ্রমণকালীন খাবার, সুন্দরবনে প্রবেশ, গাইড সার্ভিস, আর্মস গার্ড, ঢাকা-ঢাকা যাতায়াত ইত্যাদি। যোগাযোগ :দ্য বেঙ্গল ট্যুরস, বাড়ি-৪৫, সড়ক-২৭, ব্লক-এ, বনানী, ঢাকা। ফোন :০২-৯৮৫৭৪২৪, ৯৮৫৮১৩৪।
সুন্দরবনে ভ্রমণকালীন করণীয়
সুন্দরবন ভ্রমণে বন্যপ্রাণী দেখা খুব কঠিন কিছু নয়। ভ্রমণকালীন কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে এ বনে অনেক প্রাণীর দেখা মেলা সম্ভব। সেজন্য ভ্রমণকালীন অবশ্যই জঙ্গলবান্ধব বা কেমোফ্লাজ পোশাক পরিধান করতে হবে। জঙ্গলে চলাকালীন সর্বোচ্চ নীরবতা পালন করতে হবে। কেউ কোনো বন্যপ্রাণী দেখলে শব্দ করে অন্যকে না জানিয়ে জানাতে হবে ইশারায়। তাহলে দলের সবাই সেটা উপভোগ করতে পারবেন। ভ্রমণকালে গাইডের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে অক্ষরে অক্ষরে। সাঁতার না জানলে ছোট নৌকায় জঙ্গলে ভ্রমণকালে লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে রাখা জরুরি। জঙ্গলে হাঁটার সময় পানির বোতল সঙ্গে নিন। সুন্দরবন ভ্রমণে আপনার ট্রাভেল ব্যাগটি যথাসম্ভব হালকা রাখার চেষ্টা করুন। শিশুদের দিকে নজর রাখুন। রাতে যথাসম্ভব নীরবতা অবলম্বন করুন।
সুন্দরবনে ভ্রমণকালীন বর্জনীয়
সুন্দরবনে ভ্রমণকালীন কিছু বিষয় বর্জন করা জরুরি। বনে কিংবা পানিতে কোনো কিছু ফেলবেন না। সব ধরনের প্লাস্টিক, পলিথিন জাতীয় প্যাকেট সঙ্গে নিয়ে আসুন। দলছুট হয়ে একাকী কোথাও যাবেন না। বন্য প্রাণীকে কোনো রকম উত্যক্ত কিংবা বিরক্ত করবেন না। বনের কোনো গাছের পাতা ছিঁড়বেন না, ডাল ভাঙবেন না। জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ, এ কথা সবসময় মনে রাখুন। সুন্দরবনের খালে নামা বিপজ্জনক। রংচটা পোশাক অর্থাত্ কটকটে লাল, হলুদ, নীল ও সুগন্ধি ব্যবহার করবেন না। জঙ্গলে ধূমপান করবেন না। হৈ-হুল্লোড় থেকে বিরত থাকুন। উচ্চ শব্দে মাইকে গান-বাজনা করবেন না। মনে রাখবেন, সুন্দরবন কোনো বনভোজন কেন্দ্র নয়। এটি একটি অভয়ারণ্য। বনভোজনের নামে এ বনের পরিবেশ নষ্ট করা অনুচিত। তা ছাড়া বনের পশুরা হৈ-হুল্লোড়ে অভ্যস্ত নয়।
বনের মধ্যে কখনও আগুন জ্বালাবেন না। এক দলে পঞ্চাশ জনের বেশি সুন্দরবনে যাবেন না। এখানে ভ্রমণকালে একটি বিষয় মনে রাখা জরুরি। এটা আপনার কোনো এলাকা নয়, বন্য প্রাণীদের অভয়ারণ্যে আপনি অতিথিমাত্র। তাই ওদের নিজেদের জায়গায় এসে ওদের ক্ষতি হয় এ রকম কোনো কাজ মানুষ হিসেবে যেন আপনার দ্বারা না হয়।
সঙ্গে যা নেবেন
সুন্দরবনে ভ্রমণে কিছু জিনিস অবশ্যই সঙ্গে নেবেন। দূরবিন, ক্যামেরা, পর্যাপ্ত মেমোরি কার্ড, জাঙ্গল বুট, হাত মোজা, পা মোজা, রোদ টুপি বা হ্যাট, ছাতা, বর্ষায় বর্ষাতি, হেড ল্যাম্প কিংবা টর্চ, পতঙ্গ নিরোধক ক্রিম, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, মানচিত্র, জিপিএস ইত্যাদি।
লেখক: আলোকচিত্র ও লেখা মুস্তাফিজ মামুন | শুক্রবার, ২৭ জুলাই ২০১২, ১২ শ্রাবণ ১৪১৯
No comments:
Post a Comment