বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। এ জেলার তিন দিকেই ভারতীয় সীমান্তবেষ্টিত। এ জেলায় প্রাচীন প্রায় পনেরটি গড়ের সন্ধান পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাঁচটি (ভিতরগড়, হাসেন গড়, মীরগড়, রাজনগড় ও দেবেনগড়) গড়ের নামানুসারে এর নাম পঞ্চগড়। পঞ্চগড়ে রয়েছে বেড়ানোর জন্য অনেক মনোমুগ্ধকর জায়গা। পঞ্চগড়ে শীত একটু বেশিই। তারপরেও এ জায়গাটিতে বেড়ানোর উপযুক্ত সময় এটাই। দু-তিন দিনের সময় নিয়ে এই শীতে তাই বেড়িয়ে অসতে পারেন এই জায়গাগুলো থেকে।
রকস্ মিউজিয়াম
করতোয়া নদীর তীরে ছোট্ট সুন্দর শহর পঞ্চগড়। এ শহরের মহিলা কলেজ প্রাঙ্গণে রকস্ মিউজিয়াম। কলেজের অধ্যক্ষ নাজমুল হক ১৯৯৭ সালে এ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠা করেন। এখানকার উন্মুক্ত ও আভ্যন্তরীণ নামে দুটি গ্যালারিতে দেখতে পাবেন দুর্লভ সব পাথর। এ ছাড়া ছোট্ট এ শহরটি ঘুরে দেখতে পারেন একটু সময় নিয়ে।
তেঁতুলিয়া
পঞ্চগড় শহর থেকে সরাসরি চলে যেতে পারেন বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের জনপদ তেঁতুলিয়া। তেঁতুলিয়া জেলা পরিষদ বাংলোটি মহানন্দা নদীর তীর ঘেঁষে। বাংলোর পাশেই আছে সুন্দর একটি পিকনিক স্পট। নদীর ওপারেই ভারত। মনোমুগ্ধকর এ জায়গাটিতে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন। আকাশ ভালো থাকলে সকাল-বিকাল এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। এখানে দেখা মিলবে গ্রাম বাংলার অনেক দৃশ্য। গরু কিংবা মহিষের গাড়িতে কৃষকের ফসল তোলা এ সময়ে এখানকার নিত্য দৃশ্য। তেঁতুলিয়া থেকে প্রায় সতের কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাংলাবান্ধা। সীমান্তবর্তী এ জায়গাটিও ঘুরে আসতে পারেন।
চা বাগান
তেঁতুলিয়ায় রয়েছে বেশ কয়েকটি চা বাগান। তেঁতুলিয়া থেকে পঞ্চগড় ফেরার পথে সড়কের দুই ধারেই চা বাগানের সমাহার। ডান দিকের বাগানগুলো মূলত ভারতের। তাই এগুলোতে প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। তবে ফেরার পথে হাতের বাঁ দিকে শালবাহান রোড ধরে প্রায় দুই কিলোমিটার ভেতরে রয়েছে ময়নাগুড়ি টি এস্টেট। ছোট্ট এ চা বাগানটি যেমন সুন্দর, তারচেয়ে আরও বেশি সুন্দর এর পাশ দিয়ে বয়ে চলা ডাহুক নদী। এক সময়ের খরস্রোতা এ নদী এখন মৃতপ্রায়। কিন্তু এর সুশীতল জলধারা যে কারও মন টানবে।
এখান থেকে বেশ কিছুটা সামনে সড়কের পাশেই টিটিসিএল চা বাগান। এখানকার মেঠোপথ ধরে ভেতরে রয়েছে অনেক খোলা প্রান্তর। হাজারো পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে এ জায়গাগুলো। তেঁতুলিয়ার কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেটও এখানেই। সমতল ভূমির এ চা বাগানগুলোতে ঘুরতে পারেন সারা দিন। চা বাগান ঘুরে ফেরার পথে দেখতে পারেন কমলা বাগান। পঞ্চগড়ের বিভিন্ন স্থানে এখন কমলা চাষ হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনের কাছে জেনে যেকোনো একটি বাগান ঘুরে দেখতে পারেন। এখন কমলার মৌসুম। গাছে পাকা কমলা পাওয়া যাবে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন বাগানে।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি পঞ্চগড় যায় হানিফ এন্টারপ্রাইজ, বাবলু পরিবহন, নাবিল পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন ইত্যাদি। গাবতলী থেকে ছাড়ে এসব পরিবহনের বাস। ভাড়া ৪৫০-৬০০ টাকা। পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়া লোকাল বাস সার্ভিস আছে। তবে এখানকার বিভিন্ন স্থানে বেড়ানোর জন্য পঞ্চগড় শহর থেকে কার বা মাইক্রোবাস ভাড়া করে যাওয়া ভালো। সারা দিনের জন্য এসব জায়গা ঘুরতে রিজার্ভ সেডান কারের ভাড়া পড়বে ২০০০-৩০০০ টাকা আর মাইক্রো বাসের ভাড়া পড়বে ২৫০০-৪০০০ টাকা। পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় বাস স্টেশন এবং শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে এসব ভাড়ার গাড়ি পাওয়া যাবে।
কোথায় থাকবেন
পঞ্চগড় শহরে থাকার জন্য মোটামুটি মানের হোটেল আছে। এ রকম দুটি হোটেল হলো শহরের তেঁতুলিয়া রোডে হোটেল মৌচাক। এ হোটেলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও সাধারণ ডবল ও সিঙ্গেল কক্ষ আছে। আর বিভিন্ন রকম কক্ষের প্রতি দিনের জন্য ভাড়া ১৫০-৬০০ টাকা। যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বর :০৫৬৮-৬১২৭৯, ০১৭৩৭৩৪৮০৬৬। শহরের সিনেমা হল রোডে আছে সেন্ট্রাল গেস্ট হাউস। এ হোটেলে ১০০-৫০০ টাকায় বিভিন্ন ধরনের কক্ষ আছে। যোগাযোগ :০৫৬৮-৬৭৯১৯, ০১১৯০৯১৬০২৭।
লেখক: আলোকচিত্র ও লেখা মুস্তাফিজ মামুন
No comments:
Post a Comment