Pages

Sunday, July 29, 2012

বগুড়ার পথে...


Details
উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বারখ্যাত বাংলাদেশের প্রাচীন জনপদ বগুড়া। প্রাচীন পুন্ড্র রাজ্যের রাজধানী পুন্ড্রবর্ধনই হচ্ছে এখনকার বগুড়া জেলা। মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন প্রভৃতি আমলের বিভিন্ন নিদর্শন এখনো বর্তমান আছে এ জেলার বিভিন্ন জায়গায়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১২৭৯-১২৮২ পর্যন্ত এ অঞ্চলের শাসনকর্তা সুলতান গিয়াস উদ্দীন বলবনের পুত্র সুলতান নাসির উদ্দীন বগরা খানের নামানুসারেই এখানকার নামকরণ হয়েছে বগড়া বা বগুড়া। 
মহাস্থানগড়
বগুড়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হলো মহাস্থানগড়। বগুড়া শহর থেকে প্রায় তের কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত এ জায়গাটি। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের এক দুর্গ নগরী এই মহাস্থানগড়। এককালে, মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন রাজাদের রাজধানী ছিল এখানে। এখন শুধু সেগুলোর ধ্বংসাবশেষ নীরবে দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে। এখানে এখনো আছে ৫০০০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৪৫০০ ফুট প্রস্থের সেই প্রাচীন নগরীর দেয়াল। দেয়ালের ভেতরে রয়েছে জীয়ত্কুণ্ড, প্রাচীন মসজিদসহ নানান নির্দশন।
হযরত শাহ সুলতান বলখীর (র.) মাজার
মহাস্থান গড়ের ঠিক আগেই রয়েছে হযরত শাহ সুলতান বলখীর (র.) মাজার। এ অঞ্চলের জনগণকে রাজা পরশুরামের অত্যাচার থেকে মুক্ত করতে আফগানিস্তানের অন্তর্গত বলখ প্রদেশ থেকে শাহ সুলতান বলখীর (র) এ এলাকায় আগমন করেন। ১২০৫-১২২০ খ্রিস্টাব্দে পরশুরামের সঙ্গে তার যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত এবং নিহত হন।     
শীলা দেবীর ঘাট
মহাস্থানগড়ের পূর্ব দিকে করতোয়া নদীর তীরে রয়েছে শীলা দেবীর ঘাট। শীলা দেবী ছিলেন পরশুরামের ভগ্নি। যুদ্ধের সময় আত্মশুদ্ধির জন্য এখানেই তিনি আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। 
গোবিন্দ ভিটা
মহাস্থানগড় থেকে সামান্য উত্তরে করতোয়া নদীর বাঁকে  অবস্থিত একটি প্রত্নস্থল এটি। এটি মূলত একটি প্রাচীন মন্দির। খ্রিস্টীয় ১২শ-১৩শ শতকে রচিত সংস্কৃতি গ্রন্থ ‘করতোয়া মহাত্মতে এ মন্দিরটির কথা উল্লেখ আছে।
এখানে সর্বপ্রথম ১৯২৮-২৯ সালে এবং পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে প্রত্নতাত্তিক খননের ফলে খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতক থেকে শুরু করে বিভিন্ন যুগের নানান নিদর্শন  আবিষ্কৃত হয়েছে।
ভাসুবিহার
বগুড়া শহর থেকে প্রায় আঠারো কিলোমিটার দূরে শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এ প্রত্নস্থলটির আরেক নাম নরপতির ধাপ। খননের ফলে এখানে দুটি মধ্যম আকৃতির সংঘারাম ও একটি মন্দিরসহ আরও অনেক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়। অপেক্ষাকৃত ছোট সংঘারামটির আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ৪৯ মিটার এবং পূর্বে-পশ্চিমে ৪৬ মিটার। এর চার বাহুতে ভিক্ষুদের বসবাসের জন্য ২৬টি কক্ষ এবং কক্ষগুলোর সামনে চারপাশে ঘোরানো বারান্দা  এবং পূর্ব বাহুর কেন্দ্র স্থলে প্রবেশপথ রয়েছে। বড়টিতে ৩০টি ভিক্ষু কক্ষ এবং দক্ষিণ বাহুর কেন্দ্রস্থলে প্রবেশ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে খননের ফলে এখান থেকে প্রায় ৮০০টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।
গোকুল মেধ
বগুড়া শহর থেকে দশ কিলোমিটার উত্তরে এবং মহাস্থানগড় থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণে গোকুল গ্রামে অবস্থিত এ প্রত্নস্থলটি অনেকেই জানেন বেহুলার বাসরঘর নামে। ঐতিহাসিকগণের মতে এটি আনুমানিক সপ্তম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত।  ইট নির্মিত এ স্তুপটি পূর্ব পশ্চিমে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ এবং তিনকোণ বিশিষ্ট। খননের ফলে এ স্থাপনাটিতে ১৭২টি কক্ষ আবিষ্কৃত হয়েছে।  
মহাস্থানগড় জাদুঘর
মহাস্থানগড় থেকে সামান্য উত্তরে গোবিন্দ ভিটার ঠিক বিপরীত দিকে অবস্থিত মহাস্থান জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৬৭ সালে। এ অঞ্চলে প্রাপ্ত নানান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষিত আছে এ জাদুঘরটিতে। এ জাদুঘরের গ্রীষ্মকালীন সময়সূচি হলো বেলা ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। দুপুর ১টা থেকে ত্রিশ মিনিট মধ্যাহ্ন বিরতি। আর শীতকালীন সময়সূচি হলো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা। দুপুর ১টা থেকে ত্রিশ মিনিট মধ্যাহ্ন বিরতি। মহাস্থান জাদুঘর সপ্তাহের রোববার পূর্ণ দিবস, সোমবার অর্ধ দিবস এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বন্ধ থাকে।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বগুড়া যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো সার্ভিস হলো গ্রীন লাইন, টি আর ট্রাভেলস এবং এস আর পরিবহনের এসি বাস। ভাড়া ২৫০-৩৫০ টাকা। আর এ পথে সাধারণ মানের নন-এসি বাস চলে শ্যামলী, হানিফ, এস আর, কেয়া, টি আর, বি আর টিসি, শাহ সুলতান ইত্যাদি পরিবহনের। ভাড়া জনপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা। ঢাকা থেকে বগুড়ার বাস সাধারণত ছাড়ে গাবতলী, কলেজ গেট থেকে। আর বগুড়া থেকে ঢাকার বাস ছাড়ে শহরের সাতমাথা এবং ঠনঠনিয়া থেকে। বগুড়া শহর থেকে অটো রিকশা কিংবা টেম্পুতে চড়ে আসেত পারেন মহাস্থান।
কোথায় থাকবেন
বগুড়া শহরে থাকার জন্য আছে বেশ কয়েকটি ভালো মানের হোটেল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শহরের ছিলিমপুরে হোটেল নাজ গার্ডেন, ফোন :৬২৪৬৮, ৬৩২৭২।  বনানীতে পর্যটন মোটেল, ফোন :৬৭০২৪-২৭। চার মাথার মোড়ে হোটেল সেফ ওয়ে, ফোন :৬২৬৯০, ৬৬০৮৭। বনানী ফুলদিঘীতে হোটেল সিস্তা, ফোন :৬৬৯৬৫, ৬৬৩১০। এসব হোটেলে ৫০০ থেকে ৯০০০ টাকা ভাড়া মানের বিভিন্ন রকম কক্ষ রয়েছে।

লেখাও আলোকচিত্র  মুস্তাফিজ মামুন

No comments:

Post a Comment