Pages

Sunday, July 29, 2012

উরাশিমাতারো’র দেশে


Details
শহর-পাড়া ঘুরে ভোজ আয়োজনের আদ্যপান্ত জানাতে আপনার পাশে সবসময় ছিল কড়চা’র ফুড জোন বিভাগটি। এ সপ্তাহেও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এ সপ্তাহের ফুড জোনটি অনেককে নস্টালজিক করে দেবে, আবার অনেককে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে সাগর ঘেরে একটা ছোট্ট দেশে। ভিন্ন পরিবেশনা আর খাবার উপকরণ নিয়ে ঢাকারই ভোজবিলাসের জন্য আলোচিত বনানী ১১ নম্বর সড়কের একটি খাবার ঘর নিয়ে আমাদের এ সপ্তাহের আয়োজন। লিখেছেন ও ছবি তুলেছেন এমএইচ মিশু
আগে একটু রূপকথা বলি
হেডলাইনের শব্দ দুটি ইতিমধ্যে যাদের নস্টালজিক করে ফেলেছে তাদেরকে আর জানানোর কিছু নেই। কিন্তু এখনো যারা উরাশিমা তারোর সাথে পরিচিত নন, তাদের বলছি, উরাশিমা তারো এক জেলের নাম। সূর্যোদয়ের দেশ জাপানের কল্পগল্পের নায়ক এই উরাশিমা পাড়ি জমিয়েছিলেন সমুদ্রতলের এক ভিন্ন জগতে। জাপানের এই কল্পকাহিনি বাংলাদেশেও ছিল সমান সমাদৃত। পাঠক, এ পক্ষের ভোজ আয়োজনে আমরা আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব সেই উরাশিমার দেশের খাবারের সাথে। জাপানি ফুড জোন ইচি’র সাথে।
পরিচিতির প্রথম পাঠ
বনানী ১১ নম্বর সড়কে এখন একসাথে এত খাবার দোকান যে, এখানে আলাদা করে কোনো খাবার ঘর খুঁজে পাওয়াটা মুশকিল বটে। তাই সোজাসুজি ইচি’র ঠিকানা বলতে হলে বলব, বনানী ১১ নম্বর সড়কে বাটা’র শোরুমের ঠিক উপরে চারতলায়। চারতলায় উঠেও খুব সোজা নয় ইচি’কে খুঁজে পাওয়া। কারণ, সিঁড়ি বেয়ে কিংবা লিফটে, যেভাবেই আসেন না কেন, ইচি’র আলো-আঁধারে ঘেরা প্রধান ফটকটি ভবনের একদম ডানে চেপে। দরজার সামনে দাঁড়ালেই আপনার মনে হবে এই বুঝি চলে এলাম উরাশিমার দেশে। জাপানি ভাষায় লেখা কাপড় টাঙানো ফটকটা বাঁশে তৈরি।
বাঁশের শুরুটা এখানেই
আধুনিক জাপানে বাঁশের ব্যবহার ততটা না হলেও নিভৃত জাপানে এখনো বাঁশের ব্যবহার প্রচুর। আর তারই একটা ছাপ স্পষ্ট ইচি’তে। প্রবেশদ্বার থেকে ভেতরে এগিয়ে গেলে প্রায় পুরো খাবার ঘরটিই তৈরি হয়েছে বাঁশ দিয়ে। বড় বড় কাগজে মোড়া বাতিগুলোর নির্মম হলুদাভ আলোগুলোকে আবডাল করেছে বাঁশের দেয়ালগুলো। মেঝের কিছু অংশে কাঠ আর কিছুটা খরখরে একধরনের টাইলসে মোড়া। খাবার তৈরির অংশটা কাচের দেয়াল তোলা। তাই, ভেতরে খাবার তৈরি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা কাচের মতোই পরিষ্কার।
মেঝের মাঝে মগ্ন
স্বাভাবিক বেঞ্চি আর টেবিল ছাড়াও এখানে বসার জন্য আছে একেবারে জাপানি আদলে তৈরি গদি পাতা মেঝে। কাঠের মেঝেতে বড় একটা চৌকোনা গর্ত তৈরি করে সেখানে টেবিল বসানো হয়েছে। আর তাই মেঝের গদিতে বসে চাইলেই সেই চৌকোনা গর্তে পা ঝুলিয়ে বসে খাওয়া যায়। ঘরের এই অংশটাতে প্রবেশ করতে গেলে জুতা খুলে বাইরে জুতার তাকে রেখে আসতে হবে। এ ছাড়া পারিবারিকভাবে একটু আলাদা হয়ে বসতে গেলে আছে দরজা টানা ২টি আলাদা কক্ষ।
যেভাবে শুরু হলো
১২ বছর জাপানে থেকে সেখানকার পরিবশে, খাবার, পরিবেশনা সবকিছুই ভালো লেগে যায় ইচি’র পরিচালক শোয়েব আজিজের। এরপর ঢাকায় ফিরে শুরু করেন এই রেস্টুরেন্টটি। সাথে কিছু সহযোগীও পেয়ে যান। ‘জাপানে আমাদের নিজস্ব একটা অফিস আছে, যেখানে কনসাল্টেন্টরা কাজ করেন। তাদের সহযোগিতায়ই ইচি আজকের চেহারা পেয়েছে’, বললেন শোয়েব।
খাবারদাবার
ইচি’তে জাপানি প্রায় সবধরনের খাবার পাওয়া যাবে। এখানে চাল, সবজি আর মাছের নানান উপকরণে এখানে তৈরি হয় মজাদার সব খাবার। তৈরি উপকরণ প্রায় সবটুকুই আসে জাপান থেকে। তাই খাবারে পাবেন পূর্ণ জাপানি স্বাদ। এখানে উল্লেখযোগ্য খাবারগুলোর মধ্যে ৩ ধরনের মাছ দিয়ে তৈরি সাসিমি সানটেনমোরি, ৫ ধরনের সুশি দিয়ে তৈরি নিগিরিজুশি সেট, চিংড়ি আর রকমরি সবজি দিয়ে তৈরি টেনমোরি ইত্যাদি। আছে গ্রিল চিকেনে তৈরি ইয়াকিটোরি মোরিয়া ওয়াস। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের টেম্পুরা পাওয়া যাবে। ডিপ-ফ্রাই এসব টেম্পুরা উপভোগ করা যাবে ইচি’র স্পেশাল জাপানি সসের সাথে। রাইস কিংবা নুডলসেরও অনেকগুলো ডিস পাওয়া যাবে। সবজি, গ্রিল করা মাছ, সি’ সিজন করা চিকেনের অনেকগুলো ডিস পাওয়া যাবে ইচি’তে। আর সবগুলো আইটেমই পুরোপুরি জাপানি স্টাইলে রান্না করা। ইচি’তে দুইজনের রাতের খাবারে খরচ পড়বে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। খাবার অর্ডার দেওয়ার সময় পরিমাণ সম্পর্কে আগেই জেনে নিন। কারণ, ইচির খাবারগুলো একেকটা একেক মাপে সাজানো। তাজা মাছের তৈরি সুশি কিংবা ভিন্ন স্বাদের টেম্পুরা চেখে দেখতে যেতে পারেন জাপানি রেস্টুরেন্ট ইচি’তে। ইচি’তে যেতে হবে দুপুরের খাবারের জন্য দুপুর ১২টা থেকে ৪টার মধ্যে। আর রাতের খাবারের জন্য সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টার মধ্যে। আর খাবার স্বাদের শুদ্ধতা জানান দেয়, এই খাবারগুলো সেই দেশের যেখানে উরাশিমা তারো পানির নিজে বেঁচে ছিলেন ১০০ হাজার বছর। ইচি’র ঠিকানা :চান্দিওয়ালা ম্যানশন, বাড়ি-৩২(২এফ), সড়ক-১১, ব্লক-জি, বনানী, ঢাকা। ফোন :০১৭৫৯৩১৭৯২৬, ০১৭৫৯৩১৭৯২৮। সময় :দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা।

লেখক: এমএইচ মিশু

No comments:

Post a Comment