সমুদ্রটা এ সময়ে একটু উত্তাল। সৈকতে তেড়ে আসা ঢেউগুলো তাই বড় বড়। মেঘ, বৃষ্টি আর রোদের লুকোচুরি খেলার মাঝে কখনো কখনো আবার স্বচ্ছ নীল আকাশ। সৈকতজুড়ে পর্যটকের খুব ভিড়ও নেই। কক্সবাজারের এমন অচেনা দৃশ্য দেখতে হলে এই বর্ষায় চলুন কক্সবাজার। বর্ষায় যারা কক্সবাজারের সৌন্দর্য উপভোগ করেননি, তারা আসলে কক্সবাজারের আসল রূপই দেখেননি। এ ছাড়া যারা নির্জনতার মাঝে প্রকৃতির রূপ খুঁজতে ভালোবাসেন তাদের জন্য বর্ষার কক্সবাজারই হলো আদর্শ জায়গা।
বর্ষায় কক্সবাজার ভ্রমণে রয়েছে বাড়তি কিছু সুবিধাও। অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখন খরচটাও অনেক কম। হোটেল ভাড়া এ সময়ে নেমে আসে প্রায় অর্ধেকে। অফসিজন বলে হোটেলভেদে ৪০-৬০ ভাগ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যাবে। কক্সবাজার গিয়ে প্রথমেই আপনার ভ্রমণস্থল হতে পারে সমুদ্র সৈকত। সৈকতের চেয়ারে বসে সমুদ্রের ঢেউয়ের দুরন্তপনা দেখতে দেখতে হারিয়ে যেতে পারেন অজানা কোনো ভুবনে। তবে এ সময়ে সমুদ্র স্নানে খুব সাবধানতার সঙ্গে নামুন। সৈকতে লাল পতাকা নির্দেশিত সময়ে অবশ্যই সমুদ্র-স্নানে নামবেন না। অন্যান্য সময়ে নামলেও বেশ সাবধানতার সঙ্গে সৈকতের খুব কাছাকাছি থেকে স্নান শেষ করে ফেলুন। সৈকত ঘুরে ফিরে যেতে পারেন হিমছড়ি কিংবা ইনানী। এখানে যাবার জন্য ব্যাটারিচালিত রিকশা, বেবি টেক্সি কিংবা জিপ আছে। রিকশায় গেলে পুরো পথটাই হবে আপনার জন্য অনেক মজার। এ ছাড়া এখন কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি যাবার জন্য পাওয়া যাবে ব্যাটারিচালিত রিকশা। হিমছড়ির পাহাড়, ঝরণা আর ইনানীর সৈকতে ঘুরে আবার শহরে চলে আসুন। কক্সবাজার থেকে হিমছড়ির দূরত্ব প্রায় বার কিলোমিটার আর ইনানী প্রায় বিশ কিলোমিটার। ঘণ্টা পাঁচেক সময় লাগবে জায়গা দুটি বেড়িয়ে আসতে। সন্ধ্যার আগেই আবার সৈকতে ফিরতে ভুল করবেন না। এ সময়ের সূর্যাস্তের দৃশ্যও বেশ অতুলনীয়। ভাগ্য ভালো থাকলে আকাশে রঙের খেলা আর লাল থালার মতো সূর্যের সমুদ্রজলে ডুব দেওয়ার দৃশ্য কিন্তু এ সময়েই দেখা যায়। আর ভাগ্যটা নিতান্তই খারাপ হলে বাধ সাধতে পারে আকাশের কালো মেঘ। বর্ষায় মাঝেমধ্যেই সুন্দর সূর্যাস্তের এই দৃশ্যকে থামিয়ে দেয় আকাশের কালো মেঘ। পরের দিন যেতে পারেন কক্সবাজার শহরের পার্শ্ববর্তী থানা রামু ও চকোরিয়ার ডুলাহাজরা সাফারি পার্কে। রামুতে আছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বেশ কিছু কেয়াং ও প্যাগোডা। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লামার পাড়ার বৌদ্ধ কেয়াং, রামকোট বৌদ্ধ কেয়াং। কক্সবাজারের কলাতলী থেকে জিপে কিংবা মাইক্রোবাসে এখানে আসতে পারেন। ভাড়া পড়বে ৪০-৫০ টাকা।
শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে রয়েছে ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক। বর্তমানে এর নাম বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। কক্সবাজার জেলার ডুলাহাজরা বনাঞ্চলের ডুলাহাজরা ও হারগোজা ব্লকের প্রায় ৯০০ হেক্টর জায়গাজুড়ে রয়েছে এ সাফারি পার্ক। জায়গাটি বেড়ানোর জন্য অনেক সুন্দর ও মনোরম। নানা রকম প্রাণীর দেখা মিলবে এখানে। প্রতিদিন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খোলা থাকে ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক। পার্কটিতে প্রবেশের জন্য নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১০ টাকা, স্কুল ছাত্র-ছাত্রী ৫ টাকা।
ট্রাভেল ব্যাগ :বর্ষায় বেড়ানোর সময় আপনার ট্রাভেল ব্যাগটি দেখেশুনে নির্বাচন করুন। ছাতা, বর্ষাতি, রাবারের স্যান্ডেল সঙ্গে নিন। ক্যামেরা, মোবাইল ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে ব্যাগে সবসময় একটি ভালো মানের পলিব্যাগ রাখুন। সহজে শুকিয়ে যায় এমন কাপড়ের ট্রাউজার কিংবা অন্যান্য বস্ত্র সঙ্গে নিন।
কীভাবে যাবেন :ঢাকা থেকে সরসরি কক্সবাজার যায় এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী, ইউনিক ইত্যাদি পরিবহনের নন-এসি বাস; ভাড়া ৫০০-৬৫০ টাকা। গ্রীন লাইন, সোহাগ, সৌদিয়া, এস আলম ইত্যাদি পরিবহনের এসি বাসে ভাড়া ৯৫০-১২৫০ টাকা।
কোথায় থাকবেন :কক্সবাজারে থাকার জন্য এখন প্রচুর হোটেল রয়েছে। ধরন অনুযায়ী এসব হোটেলের প্রতি দিনের রুম ভাড়া ৩০০-৫০০০ টাকা। তবে এসময়ে সব হোটেলেই আছে বিভিন্ন রকম ছাড়। কক্সবাজারে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের রয়েছে হোটেল শৈবাল, ফোন :০৩৪১-৬৩২৭৪। মোটেল উপল, ফোন :০৩৪১-৬৪২৫৮। মোটেল প্রবাল, ফোন :০৩৪১-৬৩২১১। মোটেল লাবনী, ফোন :০৩৪১-৬৪৭০৩। এছাড়া অন্যান্য হোটেল হলো হোটেল সি গাল, (পাঁচ তারা), ফোন :০৩৪১-৬২৪৮০-৯১, ঢাকা অফিস ৮৩২২৯৭৩-৬। হোটেল সি কুইন, ফোন :০৩৪১-৬৩৭৮৯, ০৩৪১-৬৩৮৭৮। হোটেল সাগর গাঁও লি. ফোন :০৩৪১-৬৩৪৪৫, ০৩৪১-৬৩৪২৮। সুগন্ধা গেস্ট হাউস, ফোন :০৩৪১-৬২৪৬৬। জিয়া গেস্ট ইন, ফোন :০৩৪১-৬৩৯২৫। হোটেল সি হার্ট, ফোন :০৩৪১-৬২২৯৮। হোটেল ডায়মন্ড প্লেস অ্যান্ড গেস্ট হাউস, ফোন :০৩৪১-৬৩৬৪২।
আলোকচিত্র ও লেখা: মুস্তাফিজ মামুন
No comments:
Post a Comment