Pages

Sunday, July 29, 2012

রসের ভ্রমণ


Details
শীতের অন্যতম আকর্ষণ খেজুর রস। কিছুকাল আগে ইট পোড়ানোর জ্বালানির অন্যতম উপকরণ খেজুর গাছ ছিল বলে দেশে গাছটি বিলুপ্তির পথে। তবে দেশে এখনো সবচেয়ে বেশি খেজুর গাছ বাঁচিয়ে রেখেছেন যশোরের বিভিন্ন এলাকার লোকজন। যশোরের পথে-প্রান্তরে এখনো দেখা মেলে সারি সারি খেজুর গাছ। সকাল-সন্ধ্যায় এসব এলাকায় এখন দেখা মিলবে গাছিদের ব্যস্ততা। ঢাকার কাছেও খেজুর রসের একটি বিখ্যাত জায়গা আছে। এই শীতে এ রকমই কয়েকটি জায়গায় ভ্রমণের বৃত্তান্ত।
ঝিটকা
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা গ্রাম। এ গ্রামের মেঠো পথগুলোর দু’পাশে এখনো দাঁড়িয়ে আছে শত শত খেজুর গাছ। শীত এলেই তাই এখানকার মানুষের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। খেজুর গাছকে রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করা, তারপর প্রতিদিন বিকেলে গাছ কাটা এবং রস থেকে গুড় তৈরি। মানিকগঞ্জ শহর ছেড়ে কিছুটা সামনে এগোলেই কালিগঙ্গা নদী। এ নদীর উপরে পাকা সেতুটির নাম ‘তরা সেতু’। এটি পেরিয়ে ওপারে কিছুটা পথ চললেই হাতের বাঁয়ের সড়কটি চলে গেছে ঝিটকা। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ঝিটকার ল্যান্ডস্কেপে বৈচিত্র্য আনে দিগন্ত জোড়া সরিষা ক্ষেত। ঘুরতে ঘুরতে এখানে দেখা মিলতে পারে কোনো ভ্রাম্যমাণ মধুচাষি দলের। ঝিটকার খেজুর গুড়েরও সুনাম আছে। ঝিটকা গ্রামের মিনহাজ উদ্দিন হাজারীর উদ্ভাবিত সাদা রঙের এ খেজুর  গুড়ের স্বাদ অতুলনীয়। হাজারীর পরিবারসহ গ্রামের বেশ কয়েকজন কারিগর আজও ধরে রেখেছেন হাজারী গুড়ের ঐতিহ্য।
কীভাবে যাবেন :ঢাকার গুলিস্তান থেকে শুভযাত্রা, বিআরটিসি পরিবহন, গাবতলী থেকে যাত্রীসেবা, পদ্মা লাইন, নবীন বরণ, ভিলেজ লাইন, জনসেবা পরিবহন, বাবু বাজার থেকে যানযাবিল, শুকতারা পরিবহনে চড়ে যাওয়া যায় মানিকগঞ্জ সদরে। ভাড়া ৪০-৫০ টাকা। সেখান থেকে লোকাল বাসে ঝিটকা আসা যায় সহজেই। তবে নিজস্ব গাড়ি কিংবা ভাড়া করা মাইক্রো বাস নিয়ে গেলে আপনার ভ্রমণ সহজ হবে।
খাজুরা
যশোর শহরের পাশেই খেজুর রসের জন্য বিখ্যাত জায়গা। এখানে গেলে জায়গাটির নামের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যাবে সহজেই। মাইলের পর মাইল সবজি খেতের মাঝে হাজারো খেজুর গাছ। খুব সকালে এখানে গাছিরা ব্যস্ত থাকেন রস নামাতে। সে রস নিয়ে পরে গৃহবধূরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন গুড় তৈরিতে। যশোর শহর থেকে ব্যাটারি চালিত রিকশা নিয়ে ঘণ্টা খানেক সময় লাগে খাজুরা আসতে। এখানে এসে মহাসড়ক ছেড়ে যেকোনো দিকের ছোট সড়কে ঢুকে পড়ুন। ভেতরে যেতে যেতে চোখে পড়বে শুধুই খেজুর গাছ আর খেজুর গাছ। ইচ্ছে হলে গাছ থেকে সদ্য নামানো হিম শীতল রসে গলা ভেজাতে পারেন।
কীভাবে যাবেন :ঢাকা থেকে সড়ক ও আকাশপথে যশোর যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও নৌপথে খুলনা যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর, কলাবাগান থেকে গ্রীন লাইন পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, ঈগল পরিবহন, শ্যামলী পরিবহনের এসি বাস যশোর যায়। ভাড়া ৬০০-৮০০ টাকা। এ ছাড়া হানিফ, শ্যামলী, সোহাগ, ঈগল ইত্যাদি পরিবহনের নন-এসি বাসও যায় যশোর, ভাড়া ২৫০-৩৫০ টাকা। ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান, জিএমজি এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ও রিজেন্ট এয়ারলাইন্সের বিমান নিয়মিত যশোরের পথে চলাচল করে। 
কোথায় থাকবেন :যশোর শহরে থাকার জন্য সাধারণ মানের ভালো হোটেল আছে। শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে হোটেল মনিহার (০৪২১-৬৪১৫০), কেশবলাল সড়কে হোটেল হাসান ইন্টারন্যাশনাল (০৪২১-৬৭৪৭৪), এম কে রোডে হোটেল আর এস (০৪২১-৬২৬১৭), গাড়িখানা সড়কে হোটেল ম্যাগপাই (০৪২১-৬৬১৪১), মিউনিসিপ্যাল রোডে হোটেল মিডটাউন (০৪২১-৬৬৫০১) কাপুড়িয়া পট্টিতে হোটেল নয়ন (০৪২১-৬৬৫৩৫) ইত্যাদি। এসব হোটেলে ২০০-১২০০ টাকায় থাকার ব্যবস্থা আছে।
অভয়নগর
যশোর শহর থেকে প্রায় পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার দূরে আরেক খেজুরের রাজ্য অভয়নগর। জায়গাটিকে অনেকে নোয়াপাড়া নামেও জানেন। অভয়নগর বাসস্ট্যান্ড থেকে পূর্ব দিকে নদী পার হয়ে ওপারে গেলে মাইলের পর মাইল খেজুর গাছ। এখানেও কৃষি ক্ষেতগুলোতে সবজির প্রাধান্য বেশি। এ এলাকায়ও ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত দেখা যায় মাইলের পর মাইল সরষে ক্ষেত। পথ চলতে চলতে নাকে এসে লাগে সরষে ফুলের ঘ্রাণ। এখানে রিকশা কিংবা ভ্যান গাড়ি নিয়ে ঘুরতে পারেন। এখানে বেড়াতে গেলে চোখে পড়বে গ্রামের চিরচেনা সব দৃশ্য। তবে এসবের বেশিরভাগই এখন খুব একটা চোখে পড়ে না অন্য জায়গাগুলোতে।
কীভাবে যাবেন :যশোর থেকে খুলনাগামী যেকোনো বাসে চড়লেই অভয়নগর নামা যাবে। যারা সরাসরি অভয়নগর আসতে চান, তাদের চড়তে হবে খুলনার বাসে।
প্রয়োজনীয় তথ্য :যাদের সকালে ঘুমের অভ্যাস তাদের জন্য রসের ভ্রমণ একটু কষ্টকর। কারণ গাছিরা সূর্য ওঠার আগেই গাছ থেকে রস নামানোর কাজটি শেষ করে ফেলেন। তাই গাছ তলায় রস খেতে হলে হাজির হতে হবে কাক ডাকা ভোরেরও আগে। গাছ থেকে নামানো হাঁড়িতে মুখ দিয়ে রস পান করবেন না। পরিষ্কার গ্লাস কিংবা পাত্রে পান করুন। কারণ খেজুরের হাঁড়িতে রাতে বাদুড় বসতে পারে। বাদুড়ের লালা কিংবা মল স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

 লেখা ও ছবি মুস্তাফিজ মামুন

No comments:

Post a Comment