Pages

Sunday, July 29, 2012

প্রবালদ্বীপের সৌন্দযে


Details
সমুদ্র শান্ত, তাই শুরু হয়ে গেছে প্রবাল দ্বীপে ভ্রমণের মৌসুম। ইতিমধ্যেই চলাচল শুরু করেছে কেয়ারী সিন্দবাদ। প্রতিদিন কয়েকশ পর্যটক নিয়ে সকালবেলা সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে নৌযানটি। এ সময়ে সেন্টমার্টিনের আকাশে আর সমুদ্রে নীলের খেলা। নীল আকাশ যেন সারাক্ষণই ডুবে থাকে সমুদ্রের নীল জলে। ভ্রমণ মৌসুমের শুরুতেই ঘুরে আসুন সেন্টমার্টিন থেকে।
টেকনাফ থানা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সমুদ্র গর্ভে মনোরম দ্বীপ সেন্টমার্টিন। এ দ্বীপের অপর নাম নারিকেল জিঞ্জিরা। প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটারজুড়ে এ দ্বীপের মূল আকর্ষণ সৈকতজুড়ে প্রবাল পাথরের মেলা, সমুদ্র তীরে সারি সারি নারিকেল বৃক্ষ, দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া সমুদ্রের নীল জলরাশি আর এখানকার অধিবাসীদের বিচিত্র জীবন যাপন। প্রায় দশ হাজার লোকের বসবাস এই দ্বীপে।
সেন্টমার্টিনের পুরো জায়গাটিই আকর্ষণীয়। এর একেকটি জায়গার বৈচিত্র্য একেক রকম। সেন্টমার্টিন ঘাটে নেমে যতই সামনে এগোবেন ততই এর বৈচিত্র্য খুঁজে পাবেন। পশ্চিম দ্বীপে গেলে এক রকম আবার পূর্ব দ্বীপটা একেবারে অন্য রকম। একটু সামনের দিকে গেলে গলাচিপাটা আবার একবারে অন্যরকম। মোটকথা পুরো দ্বীপটাই বৈচিত্র্যে ঠাসা।
সূর্যোদয় দেখার জন্য দ্বীপের প্রবেশপথ অর্থাত্ জেটি প্রান্তই উত্তম। এখানে সূর্যোদয় হয় মূলত মায়নমারের পাহাড়ের কোল থেকে। আর দ্বীপের পশ্চিম প্রান্ত থেকে সূর্যাস্ত দেখা যায় ভালোভাবে। এ সময়ে সেন্টমার্টিনের সূর্য একেবারে সমুদ্রজলেই ডুব মারে। অন্যান্য সময়ে সেটা ডুব দেয় কিছুটা উপরে। এ ছাড়া দ্বীপের দক্ষিণপ্রান্তের সৈকতের জল বেশি স্বচ্ছ। এ জায়গাটি সমুদ্রস্নানের জন্য বেশি উত্তম।
সেন্টমার্টিনের একেবারে শেষপ্রান্তে ছেড়াদ্বীপ। এক সময় এ জায়গাটি মূল দ্বীপ হতে বিচ্ছিন্ন থাকলেও বর্তমানে মূল দ্বীপের সাথে প্রায় মিলে গেছে। তবে এখনো জোয়ারের সময় এ দুই দ্বীপের সংযোগস্থলে সমুদ্রজল বিচ্ছেদ রচনা করে। তাই ছেড়াদ্বীপে প্রবেশ করতে হবে ভাটার সময়ে। ছোট একটি কেয়াবন রয়েছে এখানে। বাকিটা শুধু প্রবাল আর প্রবাল। কোনো মানুষের বসবাস নেই ছোট্ট এই দ্বীপে। সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়াদ্বীপ যাওয়ার জন্য ট্রলার কিংবা স্পিড বোট আছে। তবে ছেড়া দ্বীপে ঢেউ বেশি থাকায় অনেক সময়ই বোট থেকে নামা সম্ভব হয় না। তাই সম্ভব হলে জায়গাটিতে হেঁটে যাওয়াই ভালো। এতে পুরো দ্বীপের মূল সৌন্দর্য উপভোগ করাও সম্ভব হবে। পায়ে হেঁটে ছেড়া দ্বীপে যাওয়ার পথে দেখা মিলবে কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্রের। দ্বীপের পূর্ব সৈকত ধরে সকালবেলা হাঁটা শুরু করলে পুরো দ্বীপটি ধীর পায়ে ঘুরে আসা যাবে সন্ধ্যার মধ্যেই। হেঁটে গেলে সঙ্গে অবশ্যই দুপুরের খাবার নিয়ে যেতে হবে। কেননা ছেড়াদ্বীপে তেমন কোনো খাবার কিনতে পারবেন না।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফ যায় সেন্টমার্টিন পরিবহনের এসি ও নন এসি বাস। ভাড়া নন এসি ৬৫০ থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা। এ ছাড়াও শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক পরিবহনের নন এসি বাসও চলে এ পথে।
ভরা মৌসুমে টেকনাফের দমদমিয়া থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে প্রতিদিন সকালে কেয়ারী সিন্দবাদ, এলসিটি কুতুবদিয়া, ঈগল, এলসিটি কাজল ইত্যাদি জাহাজ চলাচল করে। তবে বর্তমানে এ পথে চলছে শুধুই কেয়ারী সিন্দবাদ (০১৮১৯৩৭৯০৮৩, ০২-৮১৫৬২৯৬)। প্রতিদিন সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে টেকনাফ থেকে এবং দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে সেন্টমার্টিন থেকে ছাড়ে জাহাজটি। এতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন-টেকনাফ দুইপথের ভাড়া ৪৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
সেন্টমার্টিনে থাকার জন্য
বেশ কিছু আবাসিক হোটেল  আছে। দ্বীপের শুরুতেই রয়েছে ব্লু মেরিন রিসোর্ট (০১৮১৭০৬০০৬৫, ঢাকা অফিস ০২-৯৫৫৬২৫১), পাশেই আছে হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজ (০১৭৪৪৩৩৯৯৫৬)। হোটেল প্রিন্স (০১৭১১২৭৬২৫০)। দ্বীপের পশ্চিম প্রান্তে আছে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের ইকো রিসোর্ট সমুদ্র বিলাস (০১৭১২০৬০৯৭১), অবকাশ পর্যটনের সেন্টমার্টিন রিসোর্ট (০১৫৫২৪২০৬০২, ঢাকা অফিস ০২-৮৩৫৮৪৮৫)। দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে কোনা পাড়ায় আছে সীমানা পেরিয়ে রিসোর্ট (০১৭২০৬৯৩৯৮০), পাশেই নীল দিগন্তে রিসোর্ট (০১৭৩০০৫১০০৪, ০২-৮৬৫২৬৭১)। 
সতর্কতা :সেন্টমার্টিন ভ্রমণে কিছু বিষয়ে সবার সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের একমাত্র এ প্রবাল দ্বীপটির জীব বৈচিত্র্য দিন দিন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। আপনার দ্বারা এর সামান্য কোনো ক্ষতি না হয় সে দিকে সবার লক্ষ রাখা উচিত। তাই স্যুভেনির সংগ্রহের নামে কেউ প্রবাল, পাথর কিংবা সামুদ্রিক শামুক-ঝিনুক আনবেন না সেখান থেকে। সমুদ্রে কিংবা সৈকতে কোনো রকম প্লাস্টিকের বোতল, প্যাকেট কিংবা কোনো ধরনের বর্জ্য ফেলবেন না। সেন্টমার্টিনে জোয়ার ভাটার সময় জানার জন্য কোনো ধরনের ফ্লাগ টাঙানো হয় না। তাই সমুদ্র স্নানে নামার আগে জোয়ার ভাটা সম্পর্কে জেনে নিন। ভাটার সময় কখনোই সমুদ্রে নামবেন না। সেন্টমার্টিনের বিভিন্ন জায়গায় প্রবাল আছে। তাই খালি পায়ে সমুদ্র নামলে পা কেটে যেতে পারে।

আলোকচিত্র ও লেখা: মুস্তাফিজ মামুন

No comments:

Post a Comment