দক্ষিণের জেলা ঝালকাঠীর বিভিন্ন জায়গায় বর্ষা মৌসুমে বসে ভাসমান হাট। এ মৌসুমের প্রায় পুরোটা সময়জুড়ে প্রতিদিন এসব হাটে শত শত নৌকার সমাগম ঘটে। কোথাও মৌসুমি ফলের হাট, কোথাও সবজির হাট আবার কোথাও নৌকার হাট। কাশ্মিরের ডাল লেক কিংবা থাইল্যান্ডে যারা ভাসমান বাজার দেখেছেন, তারা হয়তো কিছুটা মিল খুঁজে পাবেন এসব বাজারের সঙ্গে। দু-একদিনের সময় নিয়ে এসব বাজার বেড়িয়ে আসতে পারেন এই বর্ষাকালে।
ভিলরুলির পেয়ারার হাট
ঝালকাঠী জেলা শহর থেকে প্রায় পনের কিলোমিটার দূরে ভিমরুলি গ্রামে পেয়ারা হাট বসে সপ্তাহের প্রতিদিনই। সকাল থেকে প্রায় সন্ধ্যা অবধি এ হাটে চলে বিকিকিনি। পেয়ারা বোঝাই শত শত নৌকা এখানকার খালে লিকলিকিয়ে ঘুরে বেড়ায় ক্রেতার আশায়। এখানে ক্রেতা মূলত পাইকাররা। এরা বড় ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে বাজারে হাজির হয়ে ছোট ছোট নৌকার পেয়ারা কিনে ঢাকা কিংবা অন্য কোনো বড় শহরে চালান করে দেন। ভিমরুলি এ বাজারটি মূলত খালের একটি মোহনায় বসে। তিন দিক থেকে তিনটি খাল এসে মিশেছে এখানে। অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত এ মোহনায়ই নৌকা বোঝাই ফল নিয়ে ক্রেতা খুঁজে বেড়ান চাষিরা। আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা মূলত পেয়ারার বাগানেই ভরপুর। আর এসব বাগান থেকে নৌকায় করে চাষিরা সরাসরি এ বাজারে পেয়ারা নিয়ে আসেন। পেয়ারার পরে এ বাজারে অবশ্য আসে আমড়া। এ অঞ্চলে আমড়ার ফলনও সর্বত্র। এ ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময়ও এ বাজার অপেক্ষাকৃত কম লোকের সমাগমে ব্যস্ত থাকে। এ সময়ে এ বাজারের প্রধান পণ্য থাকে বিভিন্ন রকম সবজি। বাজারের উত্তর প্রান্তে খালের উপরের ছোট একটি সেতু থাকায় এখান থেকে বাজারটি খুব ভালো করে দেখা যায়। বাজারটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এখানে আসা সব নৌকাগুলোর আকার আর ডিজাইন প্রায় একইরকম। মনে হয় যেন একই কারিগরের তৈরি সব নৌকা। ভিমরুলির এ বাজারটির সবচেয়ে ব্যস্ত সময় হলো দুপর বারোটা থেকে তিনটে পর্যন্ত। এ সময়ে নৌকার সংখ্যা কয়েকশ ছাড়িয়ে যায়। ঝালকাঠী জেলা সদর থেকে মোটরবাইকে জায়গাটিতে আসতে সময় লাগে প্রায় আধাঘণ্টা। আর ইঞ্জিন নৌকায় এলে সময় লাগে এক ঘণ্টা।
কুড়িয়ানার নৌকার হাট
জায়গাটি নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) থানার ভেতরে হলেও ঝালকাঠী থেকে আসতে পারেন। মোটর বাইকে এখানে আসতে সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। আর ইঞ্জিন নৌকায় এলে সময় লাগবে দুই ঘণ্টার মতো। এখানে মূলত বর্ষা মৌসুমে বসে নৌকার হাট। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে নৌকার কারিগররা এখানে আসেন তাদের তৈরি করা নৌকা বিক্রি করতে। বিশাল জায়গাজুড়ে এখানে শত শত নৌকায় পরিপূর্ণ হয় এ হাট। সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই এ হাট বসলেও শুক্রবারে এখানে ক্রেতা-বিক্রেতার সম্মিলন ঘটে বেশি। বড় একটি নৌকার উপরে ছোট ছোট অনেক নৌকা এনে এখানকার খালে ভাসিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় থাকেন বিক্রেতারা। এক হাজার থেকে দশ হাজার টাকায় এ হাটে পাওয়া যায় বিভিন্ন আকারের নৌকা। বর্ষায় এ অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় পানি বেড়ে যাওয়ায় চলাচলের জন্য অনেকেরই নৌকার প্রয়োজন হয়। তাই অনেকেই বর্ষাকালে এ হাটে আসেন নৌকা কেনার জন্য।
আটঘর-কুড়িয়ানার পেয়ারার হাট
আটঘর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার সামনে আটঘর-কুড়িয়ানার পেয়ারার হাট। এটিও মূলত ভাসমান বাজার। বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট ছোট নৌকায় পেয়ারা নিয়ে এখানে হাজির হন চাষিরা। বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই নৌকা বোঝাই পেয়ারা বিক্রি হয়ে যায় দ্রুত। কারণ পাইকাররা এখানে চাষিদের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। এ বাজারটিও আকারে বেশ ্বড়। এ বাজারের আশপাশেই দেখা যাবে বড় বড় পেয়ারার বাগান। বাগানগুলো সাধারণত ছোট ছোট নালার দুই পাশে। চাষিরা ছোট নৌকা নিয়ে নালার মধ্যে ঢুকে গাছ থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করে থাকেন।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে নদী ও সড়ক পথে ঝালকাঠি যাওয়া যায়। ঢাকার সদরঘাট থেকে সন্ধ্যা ছয়টায় ছাড়ে বিআইডব্লিউটিএ’র রকেট স্টিমার পিএস মাহসুদ, পিএস অস্ট্রিচ এবং পিএস লেপচা (০২-৯৫৫৯৭৭৯))। ভাড়া প্রথম শ্রেণীর দ্বৈত কেবিন ১৩১০ টাকা, প্রথম শ্রেণীর একক কেবিন ৬৫৫ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণীর দ্বৈত কেবিন ৭৯০ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণীর একক কেবিন ৩৯৫ টাকা। ডেকে ১০০ টাকা। এ ছাড়া সদরঘাট থেকে সন্ধ্যা ৬টায় ঝালকাঠি যায় লঞ্চ এমভি টিপু এবং এমভি সুন্দরবন-২। ভাড়া দ্বৈত কেবিন ১২০০ টাকা, একক কেবিন ৭০০ টাকা এবং ডেকে ২০০ টাকা। ঢাকার গাবতলী থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সাকুরা পরিবহন, দ্রুতি পরিবহন, ঈগল পরিবহন, সুরভী পরিবহন, সরাসরি যায় ঝালকাঠী। ভাড়া ৩৫০-৪৫০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
ঝালকাঠী শহরে থাকার জন্য ভালো মানের কোনো হোটেল নেই। সাধারণ মানের দু-একটি হোটেল হলো কালিবাড়ি রোডে ধানসিঁড়ি রেস্ট হাউস (০৪৯৮-৬২২১২, নন-এসি দ্বৈত কক্ষ ১৫০ টাকা, নন-এসি একক কক্ষ ১০০ টাকা)। বাতাসা পট্টিতে আরাফাত বোর্ডিং (০৪৯৮-৬৩৫৮৯, নন-এসি দ্বৈত কক্ষ ১৪০ টাকা, নন-এসি একক কক্ষ ৭০ টাকা)। সদর রোডে হালিমা বোর্ডিং (০৪৯৮-৬২২৮৬, নন-এসি দ্বৈত কক্ষ ৮০ টাকা, নন-এসি একক কক্ষ ৫০ টাকা)।
লেখক: আলোকচিত্র ও লেখা: মুস্তাফিজ মামুন | শুক্রবার, ২৭ জুলাই ২০১২, ১২ শ্রাবণ ১৪১৯
No comments:
Post a Comment